ফুটবল ঈশ্বরের বিদায়
নিউজ ডেস্ক
163
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২০
পৃথিবী ছাড়লেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা; যে পৃথিবীতে গত ৬০ বছর তিনি ছিলেন কোটি মানুষের হৃদয়ে-স্বপ্নে-ভালোবাসায়-উল্লাসে-বেদনায়। পায়ের টোকায় তৈরি করেছেন শিল্পের সৌধ। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন কল্পনার রাজ্যে। সাফল্য পায়ে লুটিয়েছে, আবার ব্যর্থতাও এমন মাত্রা পেয়েছে যে মানুষ ভেবেছে এ তারই হার। এই গ্রহকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা জাদুকরের এই বিদায় তাই পৃথিবীর জন্য হৃদয় ভাঙার। অদ্ভুত এক বিয়োগব্যথায় বিষণ্ন আফ্রিকা থেকে আমেরিকা। আর্জেন্টিনা থেকে বাংলাদেশ। নিজ বাড়িতে মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আর্জেন্টাইন সময় বিকেলে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্থানীয় গণমাধ্যম।
৬০তম জন্মদিনের পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্তও (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির। এরপর ১১ নভেম্বর ফেরেন বাড়িতে। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেছিলেন, সেরে উঠবেন দ্রুত। কিন্তু হায়, কে জানত আর মাত্র কয়েকটা দিনই এই পৃথিবীর অতিথি তিনি। বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে ফুটবলের রাজা। হাসপাতালে থাকার সময়ই হাজারো সমর্থক প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন বাইরে। অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবরে পাগল হওয়ার দশা তাঁদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকার প্রয়াণ বিশ্বাসই হচ্ছে না কারো।
৬০তম জন্মদিনের পরপরই লা প্লাতার ইপেন্সা ক্লিনিকে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল ম্যারাডোনার। তবে মাদক নিয়ে সমস্যায় ভোগায় দেরি হয় হাসপাতাল ছাড়তে। তাঁর চিকিৎসকদলের অন্যতম সদস্য আলফ্রেদো কাহে যেন খারাপ কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলেন তখনই। একটা সময় ম্যারাডোনা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন মাদককে ‘বন্ধু’ বানিয়ে ফেলায়। এই নেশা ছাড়াতে কাহের পরামর্শ ছিল, ‘মদ্যপান বন্ধ করতে চিকিৎসা নিতেই হবে ম্যারাডোনাকে। সে যে এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাতে একমত পরিবারের সবাই। সাহস আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে ওর মদ্যপানের অভ্যাসের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামতে হবে আমাদের। সামনের দিনগুলোতে ডিয়েগোর সঙ্গে কী ঘটবে, সেটা একটা রহস্য। দুশ্চিন্তায় আছি এ নিয়ে।’ চূড়ান্ত সেই সর্বনাশটাই হলো গতকাল।
ম্যারাডোনার মদের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। মদ ছাড়ার পর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয় অনেক। এ জন্য ওষুধ দিয়ে শান্ত রাখা হচ্ছিল তাঁকে। পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া হয়েছিল তিগ্রের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। তাঁর যকৃৎ ও হৃিপণ্ডজনিত সমস্যা ছিল আগে থেকে। ধুঁকছিল মস্তিষ্ক আর পাকস্থলীও। শেষ পর্যন্ত আর লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারলেন না ম্যারাডোনা। তিগ্রেতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নিজের বাড়িতে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি, ‘আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে প্রচণ্ড শোকাহত আমরা। সব সময় তুমি হৃদয়ে থাকবে আমাদের।’
১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই জেতান ম্যারাডোনা। অমরত্বের পথে তাঁর পা পড়ে সেই বিশ্বকাপেই। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিকেও সাফল্যের চূড়ায় নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। নাপোলিকে দুবার সিরি ‘আ’ ও উয়েফা কাপ জিতিয়েছেন আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। ক্লাবের বাইরে আছে তাঁর ভাস্কর্যও।
আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ১৬ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু ম্যারাডোনার। ১৯৭৬ থেকে পাঁচ বছর খেলে ১৬৭ ম্যাচে করেছিলেন ১১৬ গোল। এরপর বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের পর বোকা জুনিয়র্সে দেখিয়েছেন বাঁ পায়ের জাদু। কোচ হিসেবেও সফল এই কিংবদন্তি। ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুঃসময়ে। লিওনেল মেসিরা তখন বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ার কিনারে। সেখান থেকে ম্যারাডোনার জাদুর ছোঁয়ায় আর্জেন্টিনা পৌঁছে ২০১০ বিশ্বকাপে। এরপর জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে সামলেছেন কয়েকটি ক্লাবের দায়িত্ব।
সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমনাসিয়ার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ৬০তম জন্মদিনে সর্বশেষ এসেছিলেন তাঁর দল জিমনাসিয়ার ম্যাচ দেখতে। অসুস্থতার কারণে ৩০ মিনিট পরই ছাড়েন মাঠ। অসুস্থ বাবাকে চলে যেতে দেখে তাঁর মেয়ে জিয়ান্নিনা জানিয়েছিলেন, ‘বাবাকে এভাবে দেখে হৃদয় ভেঙে গেছে।’ গতকাল তো হৃদয় ভাঙল পুরো ফুটবল বিশ্বের। ম্যারাডোনা নেই, এ-ও বিশ্বাস করতে হবে?
পেলে, না ম্যারাডোনা—এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ফুটবল বিশ্ব। তিক্ততা, শত্রুতা সব ভুলে ম্যারাডোনার মৃত্যুতে সেই পেলের শোক, ‘আমরা একদিন স্বর্গে ফুটবল খেলব।’ এমন আশার কথা বলতে পেরে পেলের হৃদয়ও নিশ্চয়ই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তিনি শুধু দেহটাই ত্যাগ করলেন, অমরত্ব নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই।
আরও পড়ুন:
সদ্য সংবাদ সম্পর্কিত আরও
বিএসইসি’র চেয়ারম্যানকে সিএসই’র অভিনন্দন
০১ মে ২০২৪
সর্বজনীন পেনশনের গ্রাহক এক লাখ ছাড়াল
২৯ এপ্রিল ২০২৪
ইউনিয়ন ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে হতাশ বিনিযোগকারীরা
২৮ এপ্রিল ২০২৪
পুঁজিবাজারে পুরুষদের চেয়েও নারীদের সুযোগ বেশি: শেখ শামসুদ্দিন
২৭ এপ্রিল ২০২৪
আরও ৯০ কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে পাঠাতে চায় ডিএসই, আটকে দিলো বিএসইসি
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সিঙ্গার বিডির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
২৪ এপ্রিল ২০২৪