ঢাকা শনিবার
১৮ মে ২০২৪
১১ মে ২০২৪

বৈশ্বিক ঋণ এখন রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে


Reporter01
35

প্রকাশিত: ০৪ মে ২০২৪
বৈশ্বিক ঋণ এখন রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে Collected from online



নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর বৈশ্বিক ঋণের ভান্ডারে আরও ১৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ কোটি ডলারের বেশি যোগ হয়েছে। এর ফলে মোট বৈশ্বিক ঋণ ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

আইএমএফের এক ব্লগপোস্টে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সব উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। কিন্তু সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণ অনেক দেশেই এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেভাবে সরকারের ঋণ বাড়ছে, তার প্রভাব মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মহামারি শুরু হওয়ার চার বছর পর এখন উন্নত দেশগুলোতে সরকারি ব্যয় প্রাক্‌–মহামারি পূর্বাভাসের চেয়ে জিডিপির ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। এ ক্ষেত্রে সুদ পরিশোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আর এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ রেখে করা হয়েছে। চীন ব্যতীত উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ব্যয়ের এই ধরন দেখে বোঝা যায়, সংকটের সময় যেসব আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, যেমন ভর্তুকি ও করছাড়ের মতো নীতি, তা থেকে বেরিয়ে আসার গতি খুব কম। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অসমন্বিত সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক দেশের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে।

সরকারি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার ওপরে আছে বিশ্বের দুই প্রধান অর্থনীতি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। মহামারি শুরুর চার বছর পর এই দুই দেশে সরকারি ঋণ বেড়েছে যথাক্রমে ২ ও ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে। এই দুটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে। চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের গতি কমে যায়। ফলে যেসব দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল, তারা ক্ষতির মুখে পড়ে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে গেলে সারা বিশ্বে বিনিয়োগ প্রবাহে ভাটা পড়ে।

এই বাস্তবতায় আইএমএফ মনে করছে, চলতি বছর রাজস্ব আয়ে টানাটানি থাকবে।

২০২৪ সালজুড়ে বিশ্বের অনেক দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনসংখ্যার হিসাবে এসব দেশে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের বসবাস। ইতিহাসে দেখা যায়, নির্বাচনের বছরে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি করহার কমে যায়। নির্বাচনের বছরে দেশে দেশে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে যায়। এবারের নির্বাচনী বছরে এই ঘাটতি যেন লাগামছাড়া না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।

আইএমএফ মনে করছে, মধ্য মেয়াদে দেশে দেশে ঘাটতি কমানোর বা সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেক দেশের সরকারি ঋণ স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য তা যথেষ্ট নয়। এখন যে নীতিতে সরকারগুলো দেশ চালাচ্ছে, সেই নীতি চলমান থাকলে ২০২৯ সালের মধ্যে সরকারের প্রাথমিক রাজস্ব ঘাটতি (সুদ ব্যয় ব্যতীত) স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকবে না। এক-তৃতীয়াংশ উন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের এক-চতুর্থাংশ দেশের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।

উদীয়মান দেশগুলোতে সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব দেশের রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনা জরুরি বলে মনে করে আইএমএফ। তাদের হিসাবে, জিডিপির অন্তত ২ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্টের সমপরিমাণ ঘাটতি কমাতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশে সরকারের ঋণ এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে না উঠলেও গত কয়েক বছরে ঋণ অনেকটা বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতি-প্রকৃতি বদলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশে ঋণ নিয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ–জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। এ ছাড়া টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয় আনুপাতিক হারে না বাড়লে ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।


আরও পড়ুন:

বিষয়: