ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দিনের শুরুতে দাম বাড়বে ‘অটো’


নিউজ ডেস্ক
274

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২
দিনের শুরুতে দাম বাড়বে ‘অটো’



শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে আজ রোববার থেকে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস বসছে। এর ফলে বেঁধে দেওয়া এ সীমার নিচে নামতে পারবে না আর কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম। আজ শেয়ারবাজারে সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপেনিং প্রাইস বা দিনের শুরুর দাম হবে বেঁধে দেওয়া এ দাম। এর আগে টানা পতন ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির এ–সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৮ জুলাই—এ ৫ কার্যদিবসের দিনের সর্বশেষ দামের বা ক্লোজিং প্রাইসের গড়ই হবে শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম। বিএসইসির এ নির্দেশনা কার্যকর করতে গিয়ে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা অটো’ বাড়বে বলে জানান স্টক এক্সচেঞ্জ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এ সংখ্যা তিন শতাধিক। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন নিয়মের কারণে বৃহস্পতিবারের বাজারমূল্যের সঙ্গে রোববারের দিনের শুরুর দামের তারতম্য হলেও সূচকে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাবে না শুরুতে। যদি লেনদেন শুরুর পর দিনের শুরুর দামের কোনো পরিবর্তন হয়, তবেই তার প্রভাব সূচকে দেখা যাবে। এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় করার পর ওই দামই হবে কোম্পানির আজ রোববার দিনের শুরুর দাম। এতে আগের দিনের তুলনায় কিছু কোম্পানির দামে পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ, গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ দামের সঙ্গে আজকের দিনের শুরুর দামে হেরফের হবে। কিন্তু সূচক গণনা হবে বাজারে শেয়ারের দামের পরিবর্তন সাপেক্ষে। এদিকে, বিএসইসির নির্দেশনার সঙ্গে মিলিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস–৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দামের একটি হিসাব করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৭টিরই দাম গত বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ বাজারমূল্যের চেয়ে বাড়বে। আর তিনটির দাম কমবে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি কোম্পানির চিত্র তুলে ধরা হলো। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসির সর্বশেষ বাজারমূল্য ছিল ৫১৪ টাকা ৫০ পয়সা। বিএসইসির নতুন বিধান অনুযায়ী, শেষ পাঁচ কার্যদিবসের দামের ভিত্তিতে কোম্পানিটির শেয়ারের বেঁধে সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস দাঁড়াবে ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সা, এটিই হবে বিএটিবিসির আজকের দিনের শুরুর দাম।
তুন নিয়মের কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৪ টাকা ২০ পয়সা বাড়বে। একই প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি বীকন ফার্মার শেয়ারের দাম বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৪ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে দাঁড়াবে ২৪৫ টাকা। একইভাবে বেক্সিমকোর দাম প্রায় দেড় টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের দাম ৬০ পয়সা, গ্রামীণফোনের দাম প্রায় ১ টাকা, লাফার্জহোলসিম ও পাওয়ার গ্রিডের দাম ১ টাকা ৩০ পয়সা, রবি আজিয়াটার দাম ১ টাকা, স্কয়ার ফার্মার দাম ১ টাকা ও তিতাস গ্যাসের দাম ১ টাকা ৩০ পয়সা বাড়বে। এসব কোম্পানির শেয়ারের দামের প্রভাব রয়েছে সূচকে। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের উত্থান–পতনের সঙ্গে সূচকও প্রভাবিত হয়। জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের কারণে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। তাতে সূচকেও বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে পারে। কারণ, দাম বাড়ার কারণে বাজার মূলধনে পরিবর্তন আসবে। তবে সূচকটি কীভাবে সমন্বয় হবে, সেটি স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের নিজস্ব বিধান অনুযায়ী নির্ধারণ করবে। টানা পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে আসায় নতুন করে আবারও ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ সরকারের নির্দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল বিএসইসি। নতুন করে আবার সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়া হলেও দরপতনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। এত দিন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বেশি কমতে পারত না। আজ থেকে শেয়ারের দাম আগের মতো এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারবে। তবে কোনোভাবেই তা নতুন করে বেঁধে দেওয়া দামের নিচে নামতে পারবে না।
দাম বেঁধে পতন ঠেকানোর এ উদ্যোগকে ‘নিয়ন্ত্রিত’ বাজারের উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা বাজারের স্বাভাবিক চরিত্রের পরিপন্থী। এ সিদ্ধান্তের কারণে অধিকাংশ শেয়ারই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়তে পারে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। আবার যেসব বাজে কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর দামও নতুন বিধানের কারণে সমন্বয় হতে পারবে না।

আরও পড়ুন:

বিষয়: