ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে জাঙ্ক শেয়ারের কদর, রহস্য কী?


নিউজ ডেস্ক
40

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৮
বাড়ছে জাঙ্ক শেয়ারের কদর, রহস্য কী?



স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারে হঠাৎ বাড়ছে জাঙ্ক শেয়ারের কদর, রহেস্য কী? লেনদেন আর মূল্য বৃদ্ধি-সবদিকেই এসব কোম্পানি শীর্ষে। পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকে। অনেকেই আমরা অল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিকে জাঙ্ক বা খারাপ শেয়ার বলে মনে করি। আসলে এ ধারণাটি সঠিক নয়। সব স্বল্প-মূলধনি কোম্পানি মানেই দুর্বল ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি বা জাঙ্ক শেয়ার না। যেসব কোম্পানি উৎপাদনে বা ব্যবসায় নেই, দীর্ঘদিন লভ্যাংশ দিচ্ছে না, বছরের পর বছর আয় (ইপিএস) নেগেটিভ, নেট এ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ) খুবই কম বা নেগেটিভ (পুঞ্জীভূত লোকসান আছে), ম্যানেজমেন্ট প্রতারণামূলক আচারণ করে বিনিয়োগের সাথে, প্রতারণামূলক ডিভিডেন্ট ঘোষাণা করে। তাদের কোম্পানির শেয়ারকে জাঙ্ক শেয়ার বলে। যেমন  লভ্যাংশ দেয় না বা  শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ট দেয় হাঠাৎ ডিভিডেন্ট খুব বেশি বা ১০০% এর কাছাকাছি স্টক দিবে বা জেট ক্যাটাগরি থেকে স্টক ডিভিডেন্ট দিয়ে এ ক্যাটাগরিতে এসে পরিচালকরা বেশি দামে (হাই প্রাইজে) পাবলিকের কাছে শেয়ার বিক্রয় করবে। আবার দুই এক বছর পর নো ডিভিডেন্ট দিয়ে জেট ক্যাটাগরিতে যাবে। আবার সময় বুঝে বিনিয়োগকারীদেরকে ঠকাতে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করবে। চলবে এ সার্কেল। অাবার প্রতারণার আছে নানা এ্যাঙ্গেল। কখন কোনটা প্রয়োগ হবে বিনিয়োকারীদের জন্য সেটা আসলেই মুশকিল। যেমন শেয়ার হোল্ডিং প্যাটার্ণে উদ্যোগতা বা পরিচালকদের শেয়ার নেই বা নাম মাত্র আছে। মানে নিজের কোম্পানির প্রতি তাদের নিজেদেরই আস্থা নেই। এমন সময় যদি দেখা যায় কোম্পানির ভাল ভাল নিউজ আসছে তবে সাবধান অথবা স্মার্ট বিনিয়োগকারীরা (যারা অভিঙ্গ, ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যাল ও মেন্টাল বিশ্লেষণগুলোর ভাল প্রয়োগ বুঝেন) সুযোগ সন্ধানি হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে অনেক ধরনের গোপন আতাঁতের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য এটা টাকা হারানো ফাঁদ। লোভ দিয়ে হাই প্রাইজে আপনার কাছে শেয়ার বিক্রয় করবে। আর শোর কেনার পরই দেখবেন শুধু দাম পড়ছে। মূল কথা নানা কায়দায়, প্রলোভনে, ভুল তথ্য দিয়ে, কৃত্রিম ডিমান্ড (চাহিদা) তৈরি করে জাঙ্ক শেয়ারগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা। অনেকে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারকে জাঙ্ক শেয়ার মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার মানেই জাঙ্ক শেয়ার না (আবার হতেও পারে)। আবার অনেক জেড ক্যাটাগরির শেয়ার ক্যাটাগরি টেকানো স্টক ডিভিডেন্ট (১০% এর কাছাকাছি) দেয়া, এ ক্যাটগরির শেয়ার থেকে ও শতগুণে ভাল হতে পারে। তবে সেটা বুঝতে হবে, জানেতে হবে ফিন্যান্সের কিছু বিষয়। অনেক সময় স্টক ডিভিডেন্ট দেওয়া থেকে নো ডিভিডেন্ট দেওয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক ভাল। স্টক ডিভিডেন্ট দিয়ে কোম্পানির মুলধন বাড়লো কিন্তু ব্যবসা না বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরাই লসে পড়ে। যেমন লাফার্জ সুরমার (বর্তমানে লাফার্জ-হোলসিম) ২০১৪  সালে নো ডিভিডেন্ট দেওয়ার পার ৩৫ টাকার কাছাকাছি থেকে ১৪০ টাকার কাছাকাছি হয় (যদিও এতোটা বাড়া উচিৎ না)। আবার ফামিলিটেক্স ২০১৩ সালে ১০০% সালে প্রায় ৭০ টাকা প্রাইজের শেয়ারটির দাম আজ ৭ টাকাও নাই! প্রতারনার জাল ছড়ানো এই সমাজে প্রতারক মানুষ চেনা খুব সহজ না তেমনি পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে প্রতারক কোম্পানি চেনা খুবই সহজ না। এটি চিনতে হলে জানতে হবে বুঝতে হবে নানা বিশ্লেষণ। তবে কেন  দূর্বল মৌলের এসব শেয়ারের দাম ডবল হয়? দাম বাড়ে হুহু করে? কারণ কৃত্রিম ডিমান্ড সাপলই। কাঁচা টাকার লোভ দিয়ে সাধারণ পাবলিকের পকেটের টাকা নিজেদের পকেটে নিয়া।  নিজেদের বিভিন্ন কোডে বিভিন্ন হাইজের থেকে দর বাড়িয়ে কেনা বেঁচা করে অনেক সময়। দাম বৃদ্ধি দেখে ঐ শেয়ার কিনে অনেকেই পুঁজি হারান। দাম বৃদ্ধি পেছেনে কোম্পানির মৌলভিত্তি না গ্যাম্বেলার বিষয়টা বুঝে কাজ করতে হবে। এসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায়, কারসাজি চক্র এ ধরনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। এতে প্রায় প্রতিদিনই দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় থাকছে এই কোম্পানিগুলো। বাজার যখন বাড়তে থাকে, তখন কিছু ক্ষণস্থায়ী বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশ করে। এরা স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না। জাঙ্ক শেয়ার থেকে যেমন দ্রুত মুনাফা করা যায়, তেমনি একবার লোকসানে পড়লে তা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে যখন ফান্ড আসে, তখন বাজারে কিছু নতুন বিনিয়োগকারী আসেন। তারা সাময়িক সর্বোচ্চ যে খাতে লাভ পান সেখানেই যান । বিনিয়োগকারীদের যতই মৌলভিত্তির শেয়ার সংগ্রহের কথা বলা হোক না কেন তারা কিন্তু সেদিকে খুব একটা ঝোঁকেন না। অনেক বিনিয়োকারী মনে করেন, মার্কেট একাধিক দল সিন্ডিকেট করে নিয়ন্ত্রন করছে। কোনো কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে কিছু কোম্পানির দর। আর এটি করছে একটি চক্র। তারা যখন খুশি একটি খাতকে বা কোম্পানিকে দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেট করে একটি একটি খাত বা কোম্পানি নিয়ে গেম করছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায় যে খাত থেকে সেদিকেই ঝুকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি থেকে যদি কেউ লাভ করতে চান তাহলে তাকে শেয়ার সংগ্রহ করে অনেক দিন ধৈর্য ধরতে হবে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতে সে সময় নেই। কারণ তাদের সংসার চালাতে হয়। পাশাপাশি দীর্ঘ ধসে তাদের মূলধন কমে গেছে। ফলে মানুষ যখন এমন শেয়ারে লাভ পাবে, তখন বিনিয়োগকারীদের হাজার বলেও থামানো যাবে না। তবে এমন শেয়ারে যদি একবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে দেখা যায় অনেক বছরেও তাদের পুঁজি ফেরত পান না। পুঁজিবাজার হচ্ছে ঝুঁকির মার্কেট। এখানে ঝুঁকি আছে, লাভও আছে অনেক। যেখানে ঝুঁকি নেই, সেখানে লাভও কম হয়। আর বিনিয়োগকারীদের চিন্তা করতে হবে তিনি কতটুকু ঝুঁকি নেবেন এবং তা সামাল দিতে পারবেন কি না। এমন হিসাব-নিকাশ করে তাকে বিনিয়োগে নামতে হবে। সঙ্গে কোম্পানি যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর ভালো প্রফিট পেতে হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগকারীদের বিশ্লেষণ সিন্ডিকেট চক্রের কাছে দুর্বল হয়ে পরছে। যে কারনে সাধারন বিনিয়োগকারীরা এই বাজার থেকে তেমন লাভবান হতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীরা হুজুগে কোম্পানিগুলোতে ঝুঁকছেন। এতে হয়তো সাময়িক লাভবান হওয়া যাবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা বাজারের ক্ষতিই করবে। যেহেতু পুঁজি যার তাকেই  বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা হতে হবে। বাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। এ অভাব পূরণ করতে হবে।
 

আরও পড়ুন:

বিষয়: