ঢাকা সোমবার
২৯ এপ্রিল ২০২৪
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিমেন্ট খাতের পুরোনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম কনফিডেন্স সিমেন্ট


নিউজ ডেস্ক
76

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
সিমেন্ট খাতের পুরোনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম কনফিডেন্স সিমেন্ট



চট্টগ্রামভিত্তিক এ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে। ২৯ বছরের পুরোনো এ কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবেই নিবন্ধিত হয়। কার্যক্রম শুরুর চার বছরের মাথায় এটি দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। নির্ধারিত নানা সূচকের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে সেরা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ‘ডিএস-৩০’ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিটি। এসব কোম্পানি ব্লু চিপ বা ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কনফিডেন্স সিমেন্ট ডিএস-৩০ সূচকের ১১ নম্বর কোম্পানির তালিকায় রয়েছে। সিমেন্ট খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটি শুরুর দিকের কোম্পানি। শেয়ারবাজারের ভালো কোম্পানিগুলো নিয়ে নিয়মিত আয়োজনে এবার থাকছে কনফিডেন্স সিমেন্ট নিয়ে প্রতিবেদন। বেসরকারি খাতের এ কোম্পানি সিমেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ, ব্যাটারিসহ আরও নানা খাতের ব্যবসায়। তবে পুরোনো কোম্পানি হিসেবে সিমেন্ট ব্যবসায় আধিপত্য হারিয়েছে সময়ের পরিক্রমায়। তাই বাজার ধরতে নতুন করে আবার বিনিয়োগে নামছে কোম্পানিটি। শুধু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির দিক থেকে নয়, দেশের পুরোনো সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যেও অন্যতম এটি। সিমেন্ট খাতের পুরোনো কোম্পানি হলেও বিক্রি ও বাজার হিস্যায় নতুন কোম্পানিগুলো পেছনে ফেলে দিয়েছে এটিকে। সিমেন্টের বাজারে বর্তমানে কনফিডেন্স সিমেন্টের বাজার হিস্যা ৩ শতাংশের আশপাশে।
সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট উৎপাদক সমিতির (বিসিএমএ) হিসাবে, বছরে বাংলাদেশের বাজারে কমবেশি ২৫ হাজার কোটি টাকার সিমেন্ট বিক্রি হয়। সেখানে কনফিডেন্সের বিক্রির পরিমাণ বছরে ৫০০ কোটি টাকার কম। কোম্পানিটির বিক্রির বড় অংশই আবার চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কোম্পানিটি যাত্রার পর থেকে চট্টগ্রামের সিমেন্ট বাজার ধরতেই বেশি তৎপর ছিল। ১৯৯১ সালে কোম্পানিটি যখন যাত্রা শুরু করে, তখন বাজারে সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত কোম্পানিটির চট্টগ্রামের বাজার ধরতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকলে বাজার হিস্যা কমতে শুরু করে কনফিডেন্স সিমেন্টের। যদিও চট্টগ্রামের বাজারে এখনো নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে কোম্পানিটি। তবে চট্টগ্রামের বাইরে এটির বাজার হিস্যা একেবারেই কম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোম্পানিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম বলেন, ‘২০০০ সাল থেকেই মূলত সিমেন্ট ব্যবসায় ব্যাপকভিত্তিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সে সময় বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ও প্রবৃদ্ধির জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল, তা নিতে পারেনি আমাদের তৎকালীন পর্ষদ। ফলে সিমেন্ট ব্যবসায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। তবে চট্টগ্রামে এখনো আমরা আমাদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছি পণ্যের মান ও দামের সঙ্গে কোনো আপস না করেই।’
সিমেন্টের বাজারে খুব বেশি আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে কোম্পানিটি। তারই অংশ হিসেবে চারটি সহযোগী কোম্পানিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্টের। কোম্পানিগুলো হলো কনফিডেন্স পাওয়ার, কনফিডেন্স ইলেকট্রিক, কনফিডেন্স ব্যাটারিজ ও কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস। এ চার সহযোগী কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা যোগ হয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্টের মুনাফায়, যার ওপর ভিত্তি করে বছরটিতে কনফিডেন্স সিমেন্টের মুনাফা প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ২৭ শতাংশ। সিমেন্টের ব্যবসায় বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি না হলেও চার বছর ধরে শেয়ারধারীদের গড়ে ৩৪ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিয়ে গেছে কোম্পানিটি। এর কারণ হিসেবে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে কোম্পানিটি করপোরেট সুশাসন ও পেশাদারত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে গেছে। এ কারণে কোম্পানির মুনাফায় একটা ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ছিল, যার সুফল বিনিয়োগকারীরাও পেয়েছেন।
ধারাবাহিকভাবে ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার কারণে কোম্পানিটির প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ রয়েছে। ডিএসইর গত নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির বিদ্যমান শেয়ারের ১৮ শতাংশের বেশি রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, সেটি প্রায় ৫২ শতাংশ। গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য উঠেছিল ১৯১ টাকায়, সেটি গত বছরের জানুয়ারিতে। এরপর বাজার খারাপ হলে কোম্পানিটির শেয়ারেরও বড় ধরনের দরপতন ঘটে। তাতে গত মার্চে এটির শেয়ারের বাজারমূল্য নেমে আসে সর্বনিম্ন ৮৬ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এটির শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ শতাংশ বা অর্ধেকের বেশি কমে যায়। এদিকে, সিমেন্ট খাতের পুরোনো কোম্পানি হিসেবে বাজার হিস্যায় নিজেদের অংশ বাড়াতে চট্টগ্রামের বাইরের বাজার ধরতে চায় কনফিডেন্স সিমেন্ট। এ কারণে নতুন করে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ঢাকার কাছে একটি কারখানা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কোম্পানিটি। এতে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। করোনার কারণে নতুন কারখানা স্থাপনের কাজটি কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী বছর নতুন কারখানা তৈরির কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানান কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম। তিনি বলেন, ‘সিমেন্ট খাতের পুরোনা কোম্পানি হিসেবে আমাদের যতটুকু বাজার হিস্যা থাকা উচিত ছিল, তা আমরা রাখতে পারিনি। তাই এ খাতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে।’
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে কনফিডেন্স সিমেন্টের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন। ঢাকায় নতুন যে কারখানা করার কথা ভাবা হচ্ছে, সেটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা হবে ছয় হাজার টন। তাতে সার্বিকভাবে কোম্পানির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার টনে।

একনজরে কনফিডেন্স সিমেন্টের তিন বছরের আর্থিক চিত্র

লভ্যাংশের পরিমাণ (বোনাস ও নগদ মিলিয়ে) অর্থবছর লভ্যাংশ ২০১৬-১৭ ৩৫% ২০১৭-১৮ ৩৫% ২০১৮-১৯ ৩০%

আরও পড়ুন: