ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন ফুড


নিউজ ডেস্ক
81

প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন ফুড



মানুষের কর্মব্যস্ততায় বদলে যাচ্ছে নাগরিক জীবনের অনেক কিছুই, বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাস। অফিস শেষে বাজার করে বাসায় ফেরা, এর ওপর রান্নাবান্না করা। কর্মজীবী মহিলাদের সকাল-সন্ধ্যা অফিস শেষে রান্নাবান্না করা বড় বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে প্যাকেটজাত রুটি, পরোটা, শিঙাড়া ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যাকেট খুলেই ঝটপট ভেজে ফেলা বা রান্না করে পরিবেশন—এমন সুবিধাতেই দেশে দ্রুত বাড়ছে হিমায়িত বা প্রস্তুত খাদ্যের বাজার। করোনা মহামারিতে এই খাবার আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। এর মধ্যে প্রাণ আরএফএল, কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হারভেস্ট, ব্র্যাক চিকেন, আফতাব ফুডস, আইজি ফুডস, রিচ ফুড, সিপি, এজি গ্রুপ, প্যারাগনসহ প্রায় ২৮-৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিরাপদ খাদ্যের অঙ্গীকারে সম্ভাবনাময় এই বাজারে এবার আসছে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরা। তারা পছন্দের নানা স্বাদের ফ্রোজেন ফুড বাজারে নিয়ে আসছে বলে জানা যায়। দেশে ২০০৬ সাল থেকে হিমায়িত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে গোল্ডেন হারভেস্ট। তাদের হিমায়িত খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে পরোটা, আলু ও ডালপুরি, বিফ ও চিকেন স্ক্রিং রোল, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন নাগেটসসহ মুরগির মাংসের তৈরি নানা পদ। এ ছাড়া চিকেন মিটবল, মিষ্টি ও ঝাল স্বাদের চিকেন উইংস, পপ চিকেন, চিকেন স্ট্রিপস নামের নতুন কয়েকটি পণ্যও বাজারে এনেছে তারা। রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপে কথা বলে জানা যায়, কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি করোনা মহামারিতে প্যাকেটজাত হিমায়িত খাবারের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। অতীতে এ ধরনের খাবার কেনার হিড়িক মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। প্যাকেটজাত খাদ্য এখন এক দিনে যা বিক্রি হয়, আগে এক সপ্তাহে তা হয়নি। বাজার সারাবেলা সুপারশপের ম্যানেজার মামুন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হিমায়িত রুটি, পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন মমো, চিকেন ফ্রাই, চিকেন নাগেটস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন মিডবল খাবারগুলোর চাহিদা ৪০-৫০ শতাংশ বেড়েছে। ক্রেতারাও এসব প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্য কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।’ ২০১৩ সালে ফ্রোজেন খাদ্যের বাজারে আসে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ঝটপট। এই ব্র্যান্ডের অধীনে পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, রুটি, চিকেন রোল, চিকেন নাগেট, চিকেন পেটি, চিকেন সসেজ, পুরি, পপকর্ন, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কর্মব্যস্ত জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে নাশতা কিংবা খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার। বিশেষ করে বর্তমানে করোনাভাইরাসে মানুষজন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার ছোট খাবারের দোকানে কম যাওয়ায় ফ্রোজেন খাবারের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরেও ফ্রোজেন খাদ্য পাঠাচ্ছে ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত পরিসরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ঝটপটের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।’ করোনাকালে হিমায়িত খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে প্যাকটেজাত খাদ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মুদি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্য, সহজেই রান্না করা যায় এমন হিমায়িত খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে।’ বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত চার-পাঁচ বছর যাবৎই হিমায়িত খাদ্যের বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বছরে গড়ে প্রবৃদ্ধি এসেছে ২০ শতাংশ করে। বর্তমানে মাংস পণ্যসহ হিমায়িত খাদ্যের বাজারের আকার এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা হবে। করোনা সেই সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আশা করা যায়, ২০২৫ সাল নাগাদ এই বাজার দ্বিগুণ বেড়ে হবে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কাজী ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৪ সালে দেশের বাজারে হিমায়িত খাদ্যপণ্যের ব্যবসা শুরু করে। নিজস্ব খামারে উৎপাদিত মুরগির তৈরি বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি টিজার্স, স্ট্রিপস, স্ক্রিং রোল, নাগেটস, পরোটা, পুরি, সমুচা—হালকা খাবারও বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কাজী ফার্মস কিচেন আউটলেট নামের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র আছে। পাশাপাশি সুপারশপ ও সাধারণ মুদি দোকানে তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কাজী ফার্মসের বিক্রয় ও বিপণন শাখার প্রধান জাকারিয়া হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, দিন দিন ফ্রোজেন খাবারের চাহিদা বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী দুজন চাকরি করছেন, মানুষের হাতে সময় কম—সব মিলিয়ে এখন সবাই রেডি টু ফুড চান। সে কারণেই ফ্রোজেন খাবারের মার্কেট বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফ্রোজেন খাবার শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত। যেগুলোতে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ আছে সেগুলো আমরা ব্যবহার করি না। আমরা সব সময় গুণগত মান নিশ্চিত করছি।’ তিনি আরো বলেন, কাজী ফার্মস বেশ কয়েকটি নতুন ফ্রোজেন পণ্য বাজারে নিয়ে এসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্পি শ্রিম্প, চিকেন পপকর্ন, খিচুড়ি উইথ চিকেন কারি ও চিকেন সাসলিক।

আরও পড়ুন:

বিষয়: