ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভৌগোলিক সুবিধাকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় সিএসই


নিউজ ডেস্ক
76

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২
ভৌগোলিক সুবিধাকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় সিএসই



দেশে প্রথমবারের মতো পণ্য বেচাকেনার জন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এজন্য সম্প্রতি অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পরামর্শ সেবা নিতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে চুক্তি করেছে সিএসই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বিষয়ে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক  সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মেহেদী হাসান রাহাত আসিফ ইব্রাহীম: সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে কমোডিটি ইকোসিস্টেম নেই। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালসহ আসিয়ানভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও উন্নত বিশ্বে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অনেকদিন ধরেই রয়েছে এবং সেগুলো ভালোভাবেই পারফর্ম করছে। আমরা দেশে একটি পরিপূর্ণ কমোডিটি কাঠামো গড়ে তুলতে চাই যেখানে ফিউচার কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কৃষি, শিল্প কিংবা ভোগ্যপণ্যভিত্তিক কমোডিটি পণ্য বেচাকেনা করার সুবিধা থাকবে। এটি স্টক এক্সচেঞ্জেরই একটি ভিন্ন রূপ হবে যেখানে পণ্য লেনদেন হবে। আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে একটি ভালো আকারে এসে দাঁড়িয়েছে। বছরে দেশে ১৪৪ বিলিয়ন ডলারের কমোডিটি লেনদেন হয়। ফলে আমাদের এখানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের উপযোগিতা রয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান শীর্ষ কর্তারা দায়িত্ব নেয়ার পর এ কার্যক্রম আরো গতি পায়। গত বছরের অক্টোবরে কমিশন থেকে এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক অনুমোদন পাই। এর পর থেকেই আমরা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়ে বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সর্বশেষ আমরা ভারতের এমসিএক্সের সঙ্গে পরামর্শক সেবা গ্রহণের জন্য চুক্তি করেছি। রমজান কিংবা কোনো বিশেষ উৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা যায়। দেশে এসব পণ্যের চাহিদা, সরবরাহ ও উৎপাদনসংক্রান্ত পরিপূর্ণ তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

দেশে আরো আগেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা উচিত ছিল। কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে চেয়েছিল, যদিও সে উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। দেশে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যে অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে সেটিকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রসারে কাজে লাগাতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা কৃষকদের সমবায় সমিতিকেও কাজে লাগাব। এর মাধ্যমে কৃষকরা আগে থেকেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের একজন ক্রেতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দামও নির্দিষ্ট করা থাকবে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কৃষক, ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, কমোডিটি ট্রেডার্স সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে। পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বীমার প্রয়োজন। দেশে এটি একেবারেই নতুন হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালাতে হবে। আমাদের একার পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রথমে আমরা দুই-তিনটি পণ্য দিয়ে এ বছরের মধ্যে এক্সচেঞ্জটি চালু করতে চাই  অবশ্য একটি পরিপূর্ণ কমোডিটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে বছর পাঁচেকের মতো সময় লাগবে। এখানে বিভিন্ন ধরনের বিধি ও প্রবিধান তৈরি করতে হবে। পণ্য শনাক্তকরণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনার উন্নয়ন, পণ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে বাজার নজরদারি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বেশকিছু আর্থিক বিষয়াদি রয়েছে। লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট চালু করতে হবে। তাই সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিসিবিএল) যদি এক বছরের মধ্যে চালু করা সম্ভব হয় তাহলে সেটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের জন্য গুদামজাত ও পণ্য সরবরাহ অবকাঠামোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এটি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষ করে থাকে। স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশে কোল্ড চেইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য সহায়ক হবে। তাছাড়া চট্টগ্রামের বেশকিছু কনগ্লোমারেট তাদের নিজস্ব জায়গায় গুদাম স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার, বিএসইসি, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, গুদামজাতকারী, কৃষকদের সংগঠন, সিসিবিএল, ব্রোকার, বীমা কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, রফতানিকারক, প্রক্রিয়াজাতকারীরাই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মূল অংশগ্রহণকারী হবেন।


আরও পড়ুন:

বিষয়: