ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রাশিয়ামুখী জাহাজ চলাচল বন্ধ চার শিপিং লাইনের


নিউজ ডেস্ক
71

প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২২
রাশিয়ামুখী জাহাজ চলাচল বন্ধ চার শিপিং লাইনের



রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সেসব দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করা তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন এ খাতের উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে গ্লোবাল পেমেন্ট মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফট সাতটি রাশিয়ান ঋণদাতার সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক শিপিং লাইন ও কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় এরই মধ্যে শিপমেন্ট হওয়া পণ্যের পেমেন্ট এবং হাতে থাকা কার্যাদেশ জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে কাজ করা প্রতিষ্ঠান যারা শিপমেন্ট করেছে এবং ব্যাংকিং সমস্যার জন্য পেমেন্ট আটকে আছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা করছে বিজিএমইএ। রাশিয়ার তৈরি পোশাক মার্কেটের সঙ্গে কাজ করা একাধিক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সিএমএ সিজিএম, মার্কস লাইন, এমএসসি, ওরিয়েন্টের মতো শিপিং লাইন রাশিয়ামুখী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ডিএইচএল, ফেডেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস রাশিয়ামুখী ডকুমেন্ট গ্রহণ করছে না। মেডিটেরানিয়ান শিপিং কম্পানি (এমএসসি) হেড অব অপারেশনস অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনমুখী এবং ১ মার্চ থেকে রাশিয়ামুখী সব কনটেইনার জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছি আমরা। ১ মার্চের পর এই দুই দেশে নতুন করে কোনো রপ্তানি পণ্যের বুকিং নিচ্ছি না। বাংলাদেশ থেকে ৩ মার্চ কয়েকটি রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজীকরণ করা হয়। ’ তিনি বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু রপ্তানি পণ্য আটকে পড়েছিল, সেগুলো আমরা সৌদি আরবের কিংস আবদুল্লাহ বন্দরে জমা রাখছি। যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই বন্দর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেনে নেওয়া হবে। ’ জানা গেছে, সুইফট বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে সাতটি রাশিয়ান ঋণদাতার সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করতে বলেছে। এই ব্যাংকগুলো ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাংকগুলো হলো ভিটিবি, ব্যাংক অটক্রিটি, নোভিকমব্যাংক, প্রমজভিয়াজব্যাংক, ব্যাংক রাশিয়া, সোভকমব্যাংক ও ভেইবি। এসব ব্যাংকের সঙ্গে সুইফট কার্যক্রম বন্ধ করতে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে। সম্প্রতি আসন্ন কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ফিফার অফিশিয়াল টি-শার্ট রপ্তানি করে আলোচনায় এসেছে সনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। ফিফা লাইসেন্সপ্রাপ্ত রাশিয়ান ক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্পোর্টসমাস্টারের জন্য ছয় লাখ টি-শার্ট তৈরি করেছে তারা। রাশিয়ার অপ্রচলিত বাজারে বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। রাশিয়ার পণ্য রপ্তানির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিকেএমইএ পরিচালক ও সনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দুই দিন আগেও আমরা পেমেন্ট এবং এলসি খুলেছি। বায়ারও আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তবে সমস্যা হচ্ছে বেশ কিছু শিপিং লাইন এবং আন্তর্জাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান রাশিয়াগামী কোনো পণ্য ও কনটেইনার পরিবহন করতে রাজি হচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান ক্রেতারা মূলত দুই মৌসুমে অর্ডার দিয়ে থাকেন। বর্তমানে শীতকালীন অর্ডারের কাজ চলছে। এই অর্ডার জুন-জুলাই মাসে শেষ হবে। বসন্ত-গ্রীষ্মকালীন অর্ডারের কাজ শুরু হবে আগস্ট মাস থেকে। সেই অর্ডার সাধারণত চূড়ান্ত করা হয় মে মাসের দিকে। এখনো দুই মাস বাকি আছে। এর মধ্যে সেখানকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ রাশিয়াভিত্তিক স্পোর্টসমাস্টার ব্র্যান্ডটির বিশ্বের সাতটি দেশের ৩১০টি শহরে ৬৬০টি রিটেইল স্টোর রয়েছে। দেশগুলো হলো রাশিয়া, বেলারুশ, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া। গত অর্থবছরে রাশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৪১ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য গেছে রাশিয়ায়। এ সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৭ শতাংশ। রাশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে যারা কাজ করছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে নিশ্চিত করে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিজিএমইএ সদস্যদের রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপাতত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যারা এরই মধ্যে শিপমেন্ট করেছে এবং যাদের পেমেন্ট আটকে গেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু রাশিয়ার বাজার নয়, আমরা পুরো ইউরোপের বাজার নিয়েও চিন্তিত। কোনো কারণে এই যুদ্ধে ইউরোপ জড়িয়ে গেলে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের প্রধান রপ্তানি বাজার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ’ পোশাক খাতের বিকল্প বাজারটিতে ব্যবসা করা উদ্যোক্তাদের পাশে সরকারের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম নূরুল হক।

আরও পড়ুন:

বিষয়: