ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পথ খুলল চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রির


নিউজ ডেস্ক
83

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
পথ খুলল চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রির



বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র (সিপি) পাওয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা ৮৬টি বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রয়ে জটিলতার অবসান হয়েছে।আইন পরিপন্থী হওয়ায় পর্যটন সুবিধায় আনা এসব গাড়ি বেশ কয়েকবার নিলামের উদ্যোগ নিয়েও এর আগে ক্রেতা মেলেনি।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত নিলামে তিনটি গাড়ি সর্বোচ্চ দরদাতাদের বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারবার নিলামে তুললেও একটিও বিক্রি হয়নি। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নিলামে বেশি দর দিয়ে একটি বিএমডব্লিউ ৭৩০ এলডি এসই অটো গাড়ি ৫৩ লাখ টাকায় পেয়েছে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার ফারজানা ট্রেডিং। নিলামে গাড়িটির রিজার্ভ ভ্যালু ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৬০ টাকা। বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের আরো একটি গাড়ি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে কাস্টমস। বিক্রি হওয়া অপর গাড়িটি টয়োটা জিপ যেটির মূল্য পাওয়া গেছে ৪১ লাখ ১০০ টাকা। আজ এ তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হবে ক্রেতাদের হাতে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, বন্দরে সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ নভেম্বর নিলামে তোলা হয়েছিল পর্যটন সুবিধায় আনা ১১০টি বিলাসবহুল গাড়ি। এর মধ্যে বিক্রি করা গেছে তিনটি।চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে বাকি থাকা গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বিলাসবহুল হলো যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রোভার গাড়ি। এ রকম সাতটি গাড়ি আছে। মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় শুল্ককরসহ ৫ কোটি টাকারও বেশি দামের গাড়ি আছে এখানে। এছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কোরিয়ায় ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড ক্রুজার, ফোর্ড, লেক্সাস, জাগুয়ার, রেঞ্জ রোভার, সিআরভি, পাজেরো রয়েছে এখন পরবর্তী নিলামে বিক্রির অপেক্ষায়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজস্ব সুরক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি পাওয়ার ব্যাপারে সাড়া পেয়েছি আমরা। এটা হলো সবচেয়ে বড় খবর কারণ এখন দীর্ঘ সময় বন্দরে আটকে থাকা এসব বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রয়ে আর জটিলতা থাকবে না। নিলামে গাড়ি ক্রয় করে খালাসে বাধা কেটে যাওয়ায় এসব নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রয়ে পথ খুলে গেল। আর কিছু গাড়ি আছে যেগুলো তৈরির পাঁচ বছরের কম সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগবে না। পরবর্তী নিলামে যেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দরদাতা অংশ নেয় এখন দ্রুত সে পদক্ষেপই নেয়া হবে।’

পর্যটকদের জন্য ‘দ্য কাস্টমস কনভেনশন অন দ্য টেম্পোরারি ইমপোর্টেশন অব প্রাইভেট ভেহিকলস (১৯৫৪) অ্যান্ড কমার্শিয়াল রোড ভেহিকলস (১৯৫৬)’ নামে একটি আন্তর্জাতিক আইন আছে যেটি সারা বিশ্বে ‘কারনেট দ্য প্যাসেজ’ নামে পরিচিত। এ সুবিধার আওতায় কোনো পর্যটক চাইলে বিনা শুল্কে তার গাড়ি নিয়ে যেকোনো দেশে প্রবেশ করতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে, ফিরে যাওয়ার সময় গাড়িটিও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এ সুবিধাটাই শুরু থেকে দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ সরকার। অথচ কর্তৃপক্ষের এটা জানাই ছিল না যে, কারনেটের বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো কনভেনশনে স্বাক্ষর না করায় এ সুবিধা দিতে বাংলাদেশ বাধ্য ছিল না।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, নিলামের ওঠা ১১০টি গাড়ির মধ্যে ৮৬টিই ছিল পাঁচ বছরের অধিক পুরনো। বিদেশ থেকে আনা পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি নিলামে বিক্রয়ের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র (সিপি) নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক আদেশ অনুসারে এ সিপি সংগ্রহ করতে হয়।এবারই পর্যটক সুবিধায় আসা বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রয়ে এবার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে। প্রথমবারের মতো গাড়ির বিস্তারিত বিবরণ ক্যাটালগে দেয়া হয়েছে। ম্যানুয়াল নিলামের পাশাপাশি সারা দেশ থেকে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণকারীদের যুক্ত করে উপযুক্ত মূল্যে এসব গাড়ি বিক্রির জন্য ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. আল আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নিলামে বিভিন্ন গাড়িতে ৫৩ লাখ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দরপত্র জমা দিয়েছিলেন ক্রেতারা।নিলামে পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিপি নেয়ার যে বিধান ছিল সেটি সমাধা করে দেয়ায় কারনেট গাড়ি পরবর্তী নিলামে বিক্রয় বেশ কার্যকর হবে।’

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা ২০১১ সালে কার্নেট ডি প্যাসেজের আওতায় বাংলাদেশে ল্যান্ড রোভার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, জাগুয়ার, লেক্সাসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে আসে। তখন শর্ত ছিল পর্যটক হিসেবে ছয় মাস পর্যন্ত এগুলো বাংলাদেশে ব্যবহার করতে পারবে। আবার তারা যখন বাংলাদেশ ত্যাগ করবে তখন এ গাড়িগুলো ফেরত নিয়ে যাবে। এ-সংক্রান্ত অঙ্গীকারনামা দিয়ে এ ধরনের বহু গাড়ি বন্দর থেকে খালাস নিলেও পরবর্তী সময়ে এদের অধিকাংশই আর ফেরত নিচ্ছেন না বরং স্থানীয় বাজারে অবৈধভাবে এসব গাড়ি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।এমনকি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এসব গাড়ি অবৈধভাবে ভুয়া দলিল দাখিল করে রেজিস্ট্রেশনও নেয়া হয়েছে বিআরটিএ থেকে। ২০১৩ সালে পর্যটক সুবিধায় আনা গাড়ি খালাসের জন্য শুল্ককরের সমপরিমাণ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাস নেয়ার আদেশ জারি ও কড়াকড়ি আরোপের পর অনেকে বন্দর থেকে শেষ পর্যন্ত আর গাড়ি আর খালাসই করেননি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ যাতে নষ্ট না হয় এ বিষয়ে সবারই সজাগ থাকা উচিত। দিনের পর দিন পড়ে থাকায় অনেক গাড়ির বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি হয়েছে। এতে মূল্যমান কমা ছাড়াও আয়ুষ্কালও কমেছে। সিপি জটিলতা কেটে যাওয়ায় এখন নিশ্চয়ই দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এভাবে দীর্ঘ সময়ে বন্দরের জায়গায় গাড়ি ফেলে রাখায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে স্থানীয় বাজারে অবৈধভাবে গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে সরকারের যে রাজস্বহানি হয়েছে, তার ব্যাপারেও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’


আরও পড়ুন:

বিষয়: