ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অনুরোধে আনঅফিসিয়ালি গ্রুপের অন্য কোম্পানিতে সার্ভিস দেই : খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ সচিব


নিউজ ডেস্ক
52

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২১
উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অনুরোধে আনঅফিসিয়ালি গ্রুপের অন্য কোম্পানিতে সার্ভিস দেই : খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ সচিব



মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান : শেয়ারবাজারের তালিকাভূক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব খান ব্রাদার্স গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানির কাজ করেন। এছাড়াও ধারাবাহিক ব্যবসায়িক লোকসান বৃদ্ধিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এসব অভিযোগের ব্যাপারে স্টক টাইমসকে খোলাখুলি উত্তর দিয়েছেন কোম্পানিটির সচিব তপন কুমার সরকার। সম্প্রতি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিবাগের কার্যালয়ে স্টক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কোম্পানিটির সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থপনা পরিচালক তোফায়েল কবির খান একই সঙ্গো আটটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন বলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক। তবে সচিব এও বলেছেন, এমডি স্যার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোতি নিয়েই এই কাজটি করছেন। এছাড়াও কোম্পানি সচিব নিজের ব্যাপারেও বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অনুরোধে খান ব্রাদার্সের অন্যান্য কোম্পানিতে আনঅফিসিয়ালি তিনি সার্ভিস দিয়ে থাকেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা যদি অনুরোধ করেন সেটি তো প্রত্যাক্ষাণ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ এর রেগুলেশন ৪২(৩) অনুযায়ী ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিগত চার বছর ধরে কোনো লিস্টিং ফি প্রদান করা হয়নি বলে সিএসই যে অভিযোগ করেছে সেটি সত্য। তবে এটাও বুঝতে হবে কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে। আর লোকসানে থাকলে লিস্টিং ফি প্রায় ২০ লাখ টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে কোম্পানি। তারপরেও আমরা লিস্টিং ফি পরিশোধ করার চেষ্টা করছি। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান কার্যালয় ও ৬ সেপ্টেম্বর কারখান পরিদর্শন করে সিএসই কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শন করে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ নিয়ে এসেছে সেগুলো প্রতিবেদন আকারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিয়েছে সিএসই। প্রতিবেদনে আরও যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- করপোরেট গর্ভনেন্স কোড, ২০১৮ এর শর্ত ৩ অনুযায়ী, কোম্পানিটি হেড অব ইন্টারনাল অডিট ও কমপ্লায়েন্স হিসেবে কাউকে নিযুক্ত করেনি।‌ প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) একইসঙ্গে খান ব্রাদার্স গ্রুপের একাধিক কোম্পানির জন্য দায়িত্ব পালন করছেন, করপোরেট গর্ভনেন্স কোড, ২০১৮ এর শর্ত ৩৩ (ই) লঙ্ঘন। কোম্পানির বন্ডেড গুদাম সম্পূর্ণরূপে কাঁচামালে পূর্ণ ছিল। কিন্তু কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, বর্তমানে কারখানাটি প্রায় ১০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। ২০১৯-২০ হিসাব বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবসা বছরের পর বছর খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে (২০১৫ থেকে ২০২০) কোম্পানির ব্যবসা ৯০ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা কমেছে, যা ২০১৫ সালের ব্যবসার তুলনায় ৭৯ শতাংশ কম। বিগত বছরগুলোতে কোম্পানির নিট মুনাফা অনেক বেশি কমেছে। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা নিট লোকসান করেছে, যা ২০২০-২১ হিসাব বছরে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কোম্পানিটির সার্বিক বিষয় অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিশেষ অডিট পরিচালনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে বিশেষ অডিটে আমদানিকৃত কাঁচামালের সঙ্গে সমন্বয়, উৎপাদিত কাঁচামালের ব্যবহার বা ইউনিটের জন্য ব্যবহার, উৎপাদিত ইউনিটের সঙ্গে বিক্রিত ইউনিট, বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানিটিসহ গ্রুপের অন্যান্য গুদামে রক্ষিত মালামাল ও গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিতে পণ্য স্থানান্তরসহ মূল্য যাচাই করা যেতে পারে। এছাড়াও সিএসই’র প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের অফিসে কর্মরত বেশিরভাগ কর্মকর্তা খান ব্রাদার্স গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানির জন্য একসঙ্গে কাজ করেন। খান ব্রাদার্স ছাড়াও, খান ব্রাদার্স গ্রুপের আরো সাতটি পুঁজিবাজারে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে। একইভাবে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আজিজুল জব্বার পুরো খান ব্রাদার্স গ্রুপের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন। আর কোম্পানিটির চেয়ারপারসনসহ অন্যান্য পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের জন্য আচরণবিধি নেই (কোড অব কন্ডাক্ট) এবং বিএসইসির করপোরেট গভর্নেন্স কোড, ২০১৮ এর শর্ত অনুযায়ী কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান কার্যালয় ও কারখানা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন সাপেক্ষে বিএসইসিতে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি স্টক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন কমিশনের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। জানা যায়, এর আগে চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সশরীরে পরিদর্শনের অনুমতি পায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) কর্তৃপক্ষ। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সশরীরে কোম্পানি পরিদর্শনের অনুমতি দেয় বিএসইসি। এ পরিদর্শন কার্যক্রমে কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতার পাশপাশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম যাচাই করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের গত ৫ সেপ্টেম্বর খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান কার্যালয় ও ৬ সেপ্টেম্বর কারখানা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছে সিএসই। তপন কুমার সরকার বলেন, আমি বিএসইসিকে সিএসইর এসব অভিযোগের ব্যাপারে জবাব দিতে প্রস্তুত আছি। যখনই জবাব চাওয়া হবে আমি জবাব দিবো।

আরও পড়ুন:

বিষয়: