ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সহজ ম্যাচ কঠিন করেই জিতল অস্ট্রেলিয়া


নিউজ ডেস্ক
53

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২১
সহজ ম্যাচ কঠিন করেই জিতল অস্ট্রেলিয়া



টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আকর্ষণ কতটা বাড়াবে এ ম্যাচ, তা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে। দুই দল মিলিয়ে ম্যাচে রান হলো ২৩৯। মার্কাস স্টয়নিসের যে চারে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত হলো, তা নিয়ে ম্যাচে বাউন্ডারির সংখ্যা ২১টি। ছক্কা তো অস্ট্রেলিয়া মারতেই পারেনি, দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসেও ছক্কাসংখ্যা মাত্র ২টি। আবুধাবিতে আজ সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচটা বুঝিয়ে দিল, টি-টোয়েন্টি মানেই যে চার-ছক্কার বিজ্ঞাপন, সেই ধারণাটা হয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়বে! পড়লে পড়ুক, অস্ট্রেলিয়া আপাতত এ নিয়ে হয়তো ভাববে না। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ স্নায়ুর পরীক্ষাও নেয়, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি স্নায়ুকেও বশে রেখে শেষ পর্যন্ত জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী রেখে আগে ব্যাট করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে মাত্র ১১৮ রান। এত অল্প রান নিয়েও যে অস্ট্রেলিয়াকে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গেছে প্রোটিয়ারা, সেটি হয়তো প্রোটিয়াদের বোলিং দক্ষতার পাশাপাশি পিচের অবস্থাও বোঝায়। তবে নখকামড়ানো উত্তেজনার শেষে দুই বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের আগে টানা ৭ ম্যাচে জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে এসেই হেরে গেল। বিশ্বকাপে এলেই দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা তো এখন ‘রীতি’ বনে গেছে। এবার অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার দলটাই ভাঙাচোরা, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। তার ওপর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে চোখধাঁধানো ফর্মে থাকা, কদিন আগে আইপিএলের ফাইনালে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে চেন্নাই সুপার কিংসকে শিরোপা জেতানো ফাফ ডু প্লেসিকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবার বিশ্বকাপের দলে ডাকেনি। কেন ডাকেনি, সে এক অজানা রহস্য হয়ে আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে বিশ্বকাপের আগে। আজ প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে দেখা দিল। টস হেরে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ইনিংসে দাপট দেখিয়েছে শুধু এক ওভারই! ইনিংসের প্রথম ওভার ছিল সেটি। মিচেল স্টার্কের করা সেই ওভারে দুই চারে ১১ রান আসে। কিন্তু প্রভাত মোটেও দিনের পূর্বাভাস দিল না! বেচারা স্টার্কেরই যা ক্ষতি হলো এতে, অস্ট্রেলিয়ার বাকি বোলাররা যেখানে ওভারপ্রতি ৫-৬ করে রান দিয়েছেন, তাঁর ৪ ওভারে রান এসেছে ৩২টি! দ্বিতীয় ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে টেম্বা বাভুমা বোল্ড হতেই যে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ধাক্কা লেগেছে, এরপর তা আর কাটিয়েই ওঠা হয়নি প্রোটিয়াদের। হ্যাজলউডের পরের ওভারে আপাতত নিরীহ একটা বলে রাসি ফন ডার ডুসেনের পা জোড়া যেন পাথুরে হয়ে গেল, নড়েইনি। উঠতে থাকা বলে পা না নাড়িয়ে ড্রাইভ করে চার মারতে গেলে তো ‘বীরেন্দর শেবাগ’ হতে হবে! কিন্তু ফন ডার ডুসেন শেবাগ নন, পায়ের কাজ না থাকলেও শেবাগের মতো ব্যাটের গতিও ছিল না। ধরা পড়লেন উইকেটের পেছনে। নিজের পরের ওভারে হ্যাজলউড দিলেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা, বোল্ড করে দেন ডু প্লেসিকে বাড়িতে রেখে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা কুইন্টন ডি কককে। অদ্ভুতুড়ে এক আউট! স্কুপ করতে চেয়েছিলেন ডি কক, বল তাঁর ব্যাটে লেগে নিজেরই প্যাডে লেগে ফেরত আসে। এরপর ক্রিজে পড়ে উল্টো ঘুরে আবার ফেরে স্টাম্পে! ২৩ রানে ৩ উইকেট নেই দক্ষিণ আফ্রিকার! মিডল অর্ডারই যা একটু লড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে চারে নামা এইডেন মার্করামই যা লড়েছেন। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন মার্করাম। চতুর্থ উইকেটে হেনরিক ক্লাসেনের (১৩) সঙ্গে গড়েন ২৩ রানের জুটি। পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলারের (১৬) সঙ্গে মার্করামের জুটিতে এল আরও ৩৪ রান। সে জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর আশায়, আবার ধাক্কা! মিলার আউট পর ক্রিজে আসতে না আসতেই তিন বলের মধ্যে আউট প্রিটোরিয়াস, এর তিন বল পর রানআউট কেশব মহারাজ। ৪ উইকেটে ৮০ থেকে এক ধাক্কায় ৭ উইকেটে ৮৩ দক্ষিণ আফ্রিকা। রাবাদার (২৩ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ১৯) সঙ্গে মিলে মার্করাম তখনো চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু দলকে ৯৮ রানে রেখে তিনিও ফেরেন। রাবাদা আর একা কতই–বা কী করতে পারতেন! দলকে ১১৮ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। অস্ট্রেলিয়ার তিন ফাস্ট বোলারই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বড় বাজি, সেই স্টার্ক, হ্যাজলউড ও কামিন্স মিলে নিয়েছেন ৬ উইকেট। অল্প এই রান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আর কতটুকুই–বা কী করতে পারত! তবু শেষ ওভার পর্যন্ত যে ম্যাচটা নিয়ে যেতে পেরেছে, এ-ই অনেক। ৩৮ রানের মধ্যে ফিঞ্চ (০), ওয়ার্নার (১৪) ও মিচেল মার্শকে (১১) হারানো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪২ রানের জুটি গড়েন স্টিভেন স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তখন মনে হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়া সহজেই জিততে যাচ্ছে। কিন্তু ৩৪ বলে ৩৫ রান করা স্মিথ লং অনে মার্করামের চোখধাঁধানো ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরতেই অস্ট্রেলিয়াও যেন ‘দক্ষিণ আফ্রিকা’ বনে গেল! দলীয় ৮০ রানে স্মিথ ফিরলেন, এক রান পর ম্যাক্সওয়েলও। আউটের ধরনটাও কী! তাবরেজ শামসির বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড! অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েডের ওপর তখন রাজ্যের চাপ। সেটির প্রভাব? ১৮ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রানও ছিল ১০১, অস্ট্রেলিয়ারও তা-ই। কিন্তু স্টয়নিস (১৬ বলে ২৪) ও ওয়েড (১০ বলে ১৫) মিলে শেষ দুই ওভারে সমীকরণটা মিলিয়ে দিলেন। আর ম্যাচটা বুঝিয়ে দিল, এমন ‘লো স্কোরিং’ ম্যাচ আরও দেখা যেতে পারে এই বিশ্বকাপে।

আরও পড়ুন:

বিষয়: