ঢাকা শনিবার
০৪ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আইসিডি নয়, বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে চায় বিজিএমইএ


নিউজ ডেস্ক
178

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২১
আইসিডি নয়, বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে চায় বিজিএমইএ



সময় ও খরচ কমাতে আইসিডি থেকে নয়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে চায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এর আগে সরকার গত বছর আমদানি পণ্যের জট কামাতে সকল ধরনের আমাদনি পণ্য আইসিডি থেকে ডেলিভারি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল।

গত ১৩ এপ্রিল সকল আমদানি পণ্য আইসিডিতে সরানোর অনুমতি চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে লকডাউন আরোপিত হলে আমদানিকৃত সকল ধরনের পণ্য চালানবাহী কন্টেইনার আইসিডি থেকে ডেলিভারির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া এই চিঠি প্রদান করেন।

এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ বলছে, আইসিডি থেকে ডেলিভারি নিলে ৪ দিন অতিরিক্তি সময় লাগবে। এতে ব্যবসায়ীরা খরচ ও সময়- উভয় দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারির অব্যাহত রাখতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। গত ২০ এপ্রিল দেওয়া ওই চিঠিতে এনবিআরের সদস্য (কাস্টম নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন।

গত বছরের মতো এবারও সকল ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি আইসিডিতে সরিয়ে নিলে চরম সংকট সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে ১৯টি বেসরকারি আইসিডির অনুমোদন দেয় সরকার। এসব আইসিডির ধারণক্ষমতা ৬৫ হাজার টিইইউ'স। খাদ্যপণ্যসহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় আইসিডি থেকে। এছাড়া জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে শতভাগ রপ্তানি পণ্য কন্টেইনার ভর্তি করা হয় আইসিডি থেকে।

বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে সময় লাগে ২ দিন। অন্যদিকে আইসিডি থেকে ডেলিভারি নিতে লেগে যায় ৬ থেকে ৭ দিন। তাছাড়া আইসিডির মাশুল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক বেশি। অতিরিক্তি চার্জ প্রদান করে প্রাইভেট আইসিডি থেকে মালামাল খালাস করা বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে সম্ভব নয়। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিতে সক্ষমতা হারাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট নেই। তাই আমদানি পণ্যের কন্টেইনার আইসিডিতে স্থান্তরের কোনো যৌক্তিকতা নেই।'

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) তথ্যমতে, বেসরকারি আইসিডি থেকে ডেলিভারি দিলে ২০ ফুট সাইজের একটি কন্টেইনারে অতিরিক্ত ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ গুনতে হয় আমদানিকারককে। বেসরকারি আইসিডির চার্জ ১২ % ভাগ বৃদ্ধি হওয়ায় এমনিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, 'আইসিডি থেকে সকল ধরনের পণ্য খালাসের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। এতে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে।'

বিজিএমই'র পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসে উদ্বুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা। পোশাক শিল্পের মালিকগণ শিল্পের ভবিষ্যৎ ও শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে পর্যাপ্ত স্থান, ইক্যুইপমেন্ট ও শ্রমিক স্বল্পতায় মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রিতাসহ প্রচুর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।'

পোশাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সময়ক্ষেপণ রোধ ও অতিরিক্ত চার্জ প্রদান ব্যতীত আমদানিকৃত পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাস অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ( শুল্ক নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকল আমদানি পণ্য বেসরকারি আইসিডি থেকে খালাসের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি এনবিআর।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক  বলেন, 'আমদানি পণ্যের কন্টেইনার বেসরকারি আইসিডি থেকে খালাসের অনুমতি দিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে। এখনো এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বন্দর কর্তৃপক্ষ পায়নি।' ২০২০ সালে কোভিড মহামারি শুরুর পর বন্দরের ভেতর কন্টেইনার জটের চাপ কমাতে সাময়িক সময়ের জন্য বন্দরের বদলে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে নিয়ে খালাসের সিদ্ধান্ত দেয় এনবিআর। ওই সময়ে বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কন্টেইনার জমে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯০১৫ টিইইউ'স (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩২,৮৪৫ টিইইউ'স।

বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকড়া'র মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, "১৯টি আইসিডিতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৬৫ হাজার টিইইউ'স। বছরে এসব আইসিডিতে ৩ লাখ আমদানি কন্টেইনার এবং ৬ লাখ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা হয়। জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে শতভাগ রপ্তানি কন্টেইনার ভর্তি করা হয় আইসিডি থেকে। এছাড়া ৩৮ ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের ডেলিভারি হয় এখান থেকে। ২০ ফুট সাইজের আমদানি পণ্যের কন্টেইনারে চার্জ ৭৩০০ টাকা এবং ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ৯১০০ টাকা চার্জ নেওয়া হয়।"


আরও পড়ুন:

বিষয়: