ঢাকা রবিবার
০৫ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

২ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা


নিউজ ডেস্ক
178

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১
২ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা



করোনাকালে ব্যবসা খাত বিপর্যস্ত। মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে সরকারের আয়ে বিশাল ধাক্কা লেগেছে। এই ধাক্কা সামলাতে বিকল্প উৎসর সন্ধানে নেমেছে সরকার। নতুন আয়ের উৎস হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ এবং বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলকে টার্গেট করা হচ্ছে। এ দুই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজস্ব আয় নিয়ে আমরা চিন্তিত। তবে যেহেতু এটি আপাতত বাড়ানো যাচ্ছে না, তাই আমরা বিকল্প চিন্তা করেছি। বিকল্প খাতগুলো থেকে প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্থ পাওয়া গেলে ব্যয় নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এগুলো হলো সব পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। রিজার্ভের অর্থে খুব বেশি চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। স্বায়ত্তশাসিত এখন ভালো অর্থ দিচ্ছে, পরে যে পারবে তার নিশ্চয়তা কী? তাই বিকল্প উৎস যাওয়ার আগে এনবিআরকে চাপ দিতে হবে। করের জাল বাড়াতে হবে। এনবিআরকে আধুনিকায়ন করতে হবে। আমাদের এত বড় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দরকার নেই। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। ব্যয় কমাতে হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে।’ সূত্র মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অর্থবছরের আর মাত্র চার মাস বাকি। গত আট মাসে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। বাকি চার মাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে এক লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৪৪ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা করে রাজস্ব আদায় করতে হবে সংস্থাটিকে, যা প্রায় অসম্ভব। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে এই ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের আয়ে বড় ঘাটতি থাকলেও ব্যয়ের লিস্ট কমছে না, বরং বাড়ছেই। আর কৃচ্ছ্রসাধনের সময় বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। বিষয়গুলো খোদ মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন এবং কভিড-১৯ জনিত অভিঘাত মোকাবেলা করে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিনিয়োগ। আমাদের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত এখনো কম রয়েছে। তাই বিনিয়োগের জন্য অর্থায়নের নতুন উৎস অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে।’ অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে নতুন উৎস খুঁজেও পেয়েছে। প্রথম উৎস হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ আরো বেশি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ৬৮টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরো বেশি অর্থ কিভাবে আনা যায় সে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আসতে পারে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় উৎস হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলকে টার্গেট করছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই তহবিলের উদ্বোধন করেন। এই তহবিলের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে লাভজনক হিসাবে বন্দর এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। বছরে সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার ৯২৩ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এ খাত থেকে প্রতি অর্থবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন:

বিষয়: