ঢাকা শনিবার
০৪ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামমুখী কর্মসংস্থানে বড় সম্ভাবনা পোল্ট্রি


নিউজ ডেস্ক
199

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২১
গ্রামমুখী কর্মসংস্থানে বড় সম্ভাবনা পোল্ট্রি



বর্তমান বাজারে পোল্ট্রিই হচ্ছে সবচেয়ে সস্তার প্রাণিজ আমিষ। মাত্র সাত থেকে আট টাকায় একটি ডিম পাওয়া যায়, ১৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় এক কেজি মাংস। এতে একদিকে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায়োজনীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে অর্থনীতিতে বাড়ছে অবদান। এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে ১৪টি লক্ষ্য অর্জনে কোনো না কোনোভাবে পোল্ট্রিশিল্পের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রাণিসম্পদ খাতে অবদান আড়াই শতাংশের ওপরে। তার মধ্যে পোল্ট্রিশিল্পের অংশই ৩৫ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এই শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গাইডলাইন অনুসারে একজন মানুষকে বছরে ন্যূনতম ১০৪টি ডিম ও দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংস খেতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ ডিম এবং মাংস উৎপাদন হচ্ছে তাতে এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিম ও মাংসের এই প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ার বড় কারণ হলো দেশে মুরগির ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইভ স্টক ইকোনমির প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি হিসাবে দেশে বছরে মাংসের চাহিদা রয়েছে ৭৩ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে মুরগিসহ দেশের মাংস উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭৭ লাখ টন। দেশে ডিমের চাহিদা রয়েছে বছরে এক হাজার ৭৩২.৬৪ কোটি পিস। উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার ৭৩৬.৪৩ কোটি পিস। গত অর্থবছর (২০১৯-২০) দেশে মোট হাঁস-মুরগি উৎপাদন হয়েছে ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ। আগের বছর ছিল ৩৪ লাখ ৭০ হাজার। বিদায়ি অর্থবছর দেশে মুরগির উৎপাদন ছিল ২৯ কোটি ৬৬ লাখ আর হাঁসের উৎপাদন ছিল পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ। আগের অর্থবছর মুরগির উৎপাদন ছিল ২৮ কোটি ৯২ লাখ ও হাঁসের উৎপাদন ছিল পাঁচ লাখ ৭৭ হাজারটি। বছর দশেক আগেও (২০১০-১১) দেশে হাঁস-মুরগিসহ পোল্ট্রির উৎপাদন ছিল ২৭ কোটি ৮৮ লাখ। অর্থাৎ গত ১০ বছরে পোল্ট্রিশিল্পে বার্ষিক উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আট কোটি। সমহারে বেড়েছে ডিমের উৎপাদনও। দেশে সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১৯-২০) ডিমের উৎপাদন ছিল এক হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। আগের বছর ছিল এক হাজার ৭১১ কেটি পিস। বছর দশকে আগেও ডিমের উৎপাদন ছিল অর্ধেকেরও কম। ২০১০-১১ সালে দেশে ডিমের উৎপাদন হয় ৫৭৪.২৪ কোটি পিস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে দৈনিক মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণ কমলেও বেড়েছে মুরগির মাংস ও ডিমের ভোগ। আগে যেখানে দৈনিক মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল ১০০৫ গ্রাম, এখন তা (২০১৬ সাল থেকে) কমে হয়েছে ৯৭৪ গ্রাম। অন্যদিকে মুরগির মাংসের দৈনিক মাথাপিছু ভোগ ১১.২২ গ্রাম থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭.৩৩ গ্রাম। ডিমের ভোগ ৭.২ গ্রাম থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩.৫৮ গ্রাম। প্রাণিজ আমিষের অপরাপর উৎসগুলোর চেয়েও পোল্ট্রির ভোগ প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। এ সময় গরুর মাংসের ভোগ ১০ শতাংশ এবং মাছের ২৬ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে পোল্ট্রির মাংস ও ডিমের ভোগ বেড়েছে যথাক্রমে ৫৪ শতাংশ এবং ৮৮ শতাংশ। প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আর্থিক সহায়তা পেলে আগামী বছরগুলোতে এ পরিমাণ আরো বাড়বে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, পোল্ট্রিশিল্পের অগ্রগতির কারণেই গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের মাইগ্রেশন কমেছে। যেহারে জনসংখ্যা বাড়ছে এবং আবাদি জমি কমছে তাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে, প্রয়োজন হবে ভার্টিক্যাল ইন্টিগ্রেশন, যা কেবল পোল্ট্রিতেই সম্ভব। বিগত বছরগুলোতে পুষ্টি ঘাটতি পূরণে পোল্ট্রির চাহিদা এবং এর ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালে সাড়ে ১৮ কোটি মানুষের জন্য পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। আবার পণ্যের দামও রাখতে হবে সামর্থ্যের মধ্যে। তার জন্য মুরগির মাংসের মাথাপিছু বার্ষিক ভোগ বাড়িয়ে ১৩ কেজি এবং ডিমের ভোগা ১৫০ থেকে ২০০টিতে উন্নীত করতে হবে। রপ্তানি শুরু করতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে। আমিষের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে পোল্ট্রি খাত। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে অনেকাংশেই চাঙ্গা করেছে ছোট ছোট পোল্ট্রি খামার। প্রবাসফেরত যুবক ও বেকারদের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। পোল্ট্রি খাত বললে মাংস, ডিম, হ্যাচারি বা বাচ্চা উৎপাদন, ফিড বা পোল্ট্রি খাদ্য, পোল্ট্রি সায়েন্স, প্রাণিজ ওষুধ, রিসাইক্লিং, ব্যাক ওয়ার্ড লিংকেজ, প্রসেসিং অ্যান্ড ফারদার প্রসেসিং ও ইনগ্রিডিংয়েন্টসহ অন্যান্য উপখাতকে বোঝায়। বিপিআইসিসির হিসাবে পোল্ট্রি খাতে সরাসরি ১২ থেকে ১৩টি সাব সেক্টর বা উপখাত জড়িত রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৭০ হাজার থেকে এক০ লাখ পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এ ছাড়া ফিড মিল রয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০টি। পোল্ট্রি খাতে প্রত্যক্ষভাবে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে আরো ৪০ লাখ লোকের। মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশই নারী। তাঁদের হিসাবে বর্তমানে এই খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকারও অধিক বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিবছর এই খাতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই লেনদেনের বড় একটি অংশই পোল্ট্রি খাদ্য, ডিম ও মুরগির মাংসের বাজারকে ঘিরে। বিপিআইসিসির হিসাবে মোট প্রাণিসম্পদের ৩৫ শতাংশই পোল্ট্রি খাত থেকে আসে। জিডিপিতে মোট প্রাণিসম্পদের অবদান রয়েছে আড়াই শতাংশ। এফএও এর একটি গবেষণা প্রতিবেদন মতে, দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ খামারই ছোট আকারের ও গ্রামে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির পর পোল্ট্রির অবদানই সবচেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন:

বিষয়: