ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

এবার বাংলাদেশের পাটপণ্যে ভর্তুকি বিরোধী শুল্কারোপ করবে ভারত


নিউজ ডেস্ক
107

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২১
এবার বাংলাদেশের পাটপণ্যে ভর্তুকি বিরোধী শুল্কারোপ করবে ভারত



বাংলাদেশের পাটপণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি বসানোর পর এবার নতুন করে কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপ করতে যাচ্ছে ভারত। পাটপণ্যে বাংলাদেশ ভর্তুকি দিয়ে রপ্তানি করছে- এমন কারণ দেখিয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশটি। বাংলাদেশ এর বিরোধীতা করে বলেছে যে, সরকার তার সমস্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে, তাই ভারতের এ অভিযোগের ভিত্তি নেই।

গতকাল রোববার (৭ মার্চ) সচিবালয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রথম দিনের আলোচনা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ তথ্য জানান। তার আগে ভারতের বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধোয়ান এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "ভারত বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর অনেক আগে থেকেই অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে। পাটপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ভর্তুকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে তারা। বাংলাদেশের কিছু কিছু কোম্পানির তালিকা করে ওইসব কোম্পানির ভারতে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করবে বলেছে।"

"সোমবার (৮ মার্চ) সচিব পর্যায়ের চূড়ান্ত বৈঠকে বিষয়টি আমরা এক নম্বর এজেন্ডা হিসেবে রেখেছি। আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো আমরা," মন্ত্রী জানিয়েছেন।'ভারতের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ করার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে, যদিও তা ভারতের বাণিজ্য সচিবকে আমরা এখনও বলিনি'- তিনি যোগ করেন।২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতিটন পাটপণ্য ও পাটের বস্তায় ১৯ ডলার থেকে ৩৫১.৭২ ডলার পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে।গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব কয়েকমাস ধরে পাটপণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং ও কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপ নিয়ে ভারতের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হয়েছে। আমরা অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু, তারা তা প্রত্যাহার করবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে, কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপের বিপক্ষে আমরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছি। তা সত্বেও কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপের উদ্দেশ্যে তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।"

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাস্টমস সমস্যা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ইস্যুকৃত কান্ট্রি অব অরিজিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করা, স্থলবন্দরের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে আজ প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।"'ভারতের বাণিজ্য সচিব আমাদের বলেছেন যে, তিনি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিভিন্ন সমস্যা যতোটা সম্ভব সমাধানে কাজ করবেন তিনি'- যোগ করেন বাণিজ্য মন্ত্রী।

টিপু মুনশি বলেন, "স্বাধীনতার সময় বন্ধু হিসেবে ভারত সহায়তা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা আসছেন। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা দূর করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়টিও ভারত স্মরণীয় করে রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছি।"তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভোজ্যতেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ইপিবির দেওয়া কান্ট্রি অব অরিজিন সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা মূল্য সংযোজনের তথ্য বিশ্বাস করছে না ভারত। তারা চাইছে, তাদের একটি কমিটি বাংলাদেশে এসে মূল্য সংযোজনের তথ্য যাচাই করবে। সার্টিফিকেশন অব অরিজিন নিয়েও তাদের প্রশ্ন আছে।

"কিন্তু, আমরা ভারতের বাণিজ্য সচিবকে বলেছি, প্রাইসিং ও মূল্য সংযোজন নির্ধারণ আমাদের অধিকার এবং সেটি আমরাই করবো" - জানান মন্ত্রী।একশ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় সামান্য। গত অর্থবছর দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.১০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি হয়েছে ৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। চীনের পরেই ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

"পরপর দু'বার ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় আমাদের মনে হয়েছে যে, পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকা ঠিক হবে না। আমরা বিকল্প বাজারের ব্যবস্থা করে রাখছি। তবে গ্রীষ্মকালে উৎপাদন হয়, এমন পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে দেশটি।"

ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, "এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর ইউরোপিয় ইউনিয়নের বাজারে বাড়তি তিন বছর জিএসপি সুবিধা পাবে। অর্থাৎ, ২০২৯ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি হঠাৎ করে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। তখন আমাদের রপ্তানি আয় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে বলে সরকারের তথ্যে উঠে এসেছে।"

সিইপিএ নিয়ে দুই দেশে সমীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রপ্তানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন যে ধরনের শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর সিইপিএ চুক্তির আওতায় একই ধরনের সুবিধা পাওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। এতে ভারতের আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।আগামী বছর নাগাদ এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে গত ফেব্রুয়ারিতেজানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৯ সালের রপ্তানি বাণিজ্যের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট ও প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তার অংশ হিসেবেই সিইপিএ স্বাক্ষরের পক্ষে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া ও নেপালের সঙ্গে খুব শিগগিরই পিটিএ স্বাক্ষর হবে। চলতি বছরের মধ্যে আমরা ১০-১১টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সই করবো।

এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের ফলে এখন আপাতত রাজস্ব আয়ের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে- তা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রীও দ্বিপাক্ষিকভাবে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সচিবের সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন, ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শহীদুল ইসলাম এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন।


আরও পড়ুন:

বিষয়: