ঢাকা শনিবার
০৪ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বারিধারা, লালমাটিয়া, গুলশানের ফ্ল্যাটের দাম


নিউজ ডেস্ক
209

প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২১
অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বারিধারা, লালমাটিয়া, গুলশানের ফ্ল্যাটের দাম



জনসংখ্যার চাপে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ঢাকার জমি ও ফ্ল্যাটের দাম। তবে ধনী-গরীবের বৈষম্য বৃদ্ধির মতো জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের দামেও বৈষম্য তৈরি হয়েছে ঢাকায়। ঢাকার হাউজিং ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বারিধারায়। ২০০৫- ২০২০ সময়ে পাঁচগুণ হয়েছে ওই এলাকার অ্যাপার্টমেন্টের দাম। লালমাটিয়া, গুলশান, বনানীতেও চারগুণের বেশি হয়েছে অ্যাপার্টমেন্টের দাম। অন্যদিকে ঢাকার মিরপুরে একই সময়ে দাম বেড়েছে মাত্র ১.২ গুণ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিকল্পিত নগর, নিরাপত্তা ও আধুনিক নাগরিক সুবিধার কারণে কিছু জায়গায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম অনেক বেড়েছে। আবার কিছু জায়গায় চাহিদার তুলনায় নতুন ভবন নির্মাণের জায়গা না থাকায় বেড়েছে অ্যাপার্টমেন্টের দাম। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে।

এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়া। বারিধারা, গুলশান ও বনানী এলাকায় দুই দশকে জমির দাম ১০-১২ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। রিহ্যাব ও এর সদস্যদের ২০০৫ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অ্যাপার্টমেন্টের দাম ও বর্তমান দামের তথ্য নিয়ে একটি আনুমানিক গড়মূল্য তালিকা তৈরি করেছে

তালিকা অনুযায়ী বারিধারায় ২০০৫ সালে ৪০০০ টাকা (প্রতি বর্গফুট) দামে ভালো মানের অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া যেতো। এখন ওই এলাকায় ভালো মানের অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রতি বর্গফুটে ২৫০০০ টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে একজন ক্রেতাকে। কিছুক্ষেত্রে বর্গফুট প্রতি ২৮০০০ টাকাও পড়ছে ফ্ল্যাটের দাম। অর্থাৎ ১৫ বছরের ব্যবধানে বারিধারায় ফ্ল্যাটের দাম চারগুণেরও বেশি বেড়েছে।

গুলশানে তখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ছিল ৪৫০০ টাকা, বনানীতে ৩৫০০ টাকা, ধানমন্ডিতে ৩৫০০ টাকা, লালমাটিয়ায় ৩৫০০ টাকা। এখন ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটের জন্য প্রায় ১৪ হাজার টাকা, গুলশানে ১৮ হাজার টাকা, বনানীতে ১৫ হাজার আর লালমাটিয়ায় ১৪৫০০ টাকা টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে।

বারিধারায় বর্তমানে একটি চলমান প্রজেক্ট রয়েছে সুভাস্তু প্রপার্টিজের। প্রতিষ্ঠানটি ৩৪০০ স্কয়ার ফিটের প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের বর্গফুট প্রতি আস্কিং প্রাইজ ধরেছে ২৫০০০ টাকা। সুভাস্তু প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক খান বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নান্দনিকতা ও নাগরিক সুবিধার ওপর নির্ভর করে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বেড়েছে। জমির ক্রয় খরচ ও নির্মাণ ব্যয় বড় ভূমিকা রাখে দামের ক্ষেত্রে।

বারিধারাসহ কিছু এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে এলাকাভিত্তিক বৈষম্যও দেখা যাচ্ছে বড় করে। ২০০৫ সালে মোহাম্মদপুর ও বারিধারায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দামে পার্থক্য ছিল মাত্র ২৩০০ টাকা। এখন সেই প্রতি বর্গফুটে হয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা।আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মোহাম্মদপুরের মতোই উত্তরা, মিরপুরের সাথে লালমাটিয়া, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা এলাকার অ্যাপার্টমেন্টের দামে বড় বৈষম্য তৈরি হয়েছে।

তবে সর্বশেষ পাঁচ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে গুলশান-বনানী ও ধানমন্ডির চেয়ে মোহাম্মদ-মিরপুরে অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইন ফ্ল্যাট ফর্ম বিক্রয় ডটকম। হাউজিং কোম্পানির আসকিং প্রাইজ ও ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গার অ্যাপার্টমেন্টের ওই মূল্যবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে বিক্রয় ডটকম। বিক্রয় ডটকম বলছে, গত পাঁচ বছরে মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটের দাম ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বসুন্ধরা-ধানমন্ডি এলাকায় এ বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ ও উত্তরাতে ৩০ শতাংশ।

বিক্রয় ডটকমের কো-ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইশিতা শারমিন  বলেন.অন্যদিকে গুলশান-বনানীতে এ সময় আবাসিক ফ্ল্যাটের দাম মাত্র ১০ শতাংশ বেড়েছে।নাগরিক সুবিধার কারণে চাহিদা বেড়ে কিছু এলাকায় ভূমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বৈষম্য হয়েছে বলে মনে করছেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন। বারিধারা, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী এলাকায় জমির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ফি, ভূমির রেজিস্ট্রেশন ফিসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জমির দামে বৈষম্য আরো বেশি 

দেশের রিয়েল এস্টেট খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান শেলটেকের তথ্য নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গার জমির দামের একটি তুলনামূলক চিত্র দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসি রিভিউ রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী ২০০০ সালে গুলশানে প্রতিকাঠা জমির দাম ছিল ২২ লাখ টাকা করে। এখন ওই জমির দাম ৫ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ২০ বছরে ওই জমির দাম বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ।

এ সময়ের ব্যবধানে ধানমন্ডিতে ১৮ গুণ, বনানীতে ১৫ গুণ ও বারিধারার জমির দাম বেড়েছে ১২ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকায় কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকায় লেনদেন বারিধারার জমি। ২০০০ সালে বারিধারায় কাঠাপ্রতি জমির দাম ছিল ৫০ লাখ টাকা। গুলশান, বনানী, বারিধারায় জমির দাম আকাশছোঁয়া হলেও এখনো কাঠা প্রতি কোটি টাকার চেয়ে অনেক কম উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ বেশ কয়েকটি এরিয়াতে। বিশ বছরে মিরপুরের জমির দাম বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ।

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, জমির মূল্যবৃদ্ধি ও এলাকার আবেদন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বৈষম্যের মূল কারণ। আর এলাকার আবেদন নির্ভর করে পরিকল্পনা ও নাগরিক সেবার ওপর।


আরও পড়ুন:

বিষয়: