জাহাজ ভাঙায় এবারও শীর্ষে বাংলাদেশ
নিউজ ডেস্ক
198
প্রকাশিত: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় আমদানি কমলেও জাহাজ ভাঙায় গেল বছরেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিগত ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে পুরনো জাহাজ আমদানি সাড়ে ১১ শতাংশ কমেছে। এর পরও বিশ্বের জাহাজ ভাঙায় ২০২০ সালেও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। এনজিওশিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইটে গত ২ ফেব্রুয়ারি এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
তালিকা মতে, ২০২০ সালে বিশ্বে ৬৩০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান—এই তিন দেশে। বাংলাদেশ ১৪৪টি জাহাজ ভেঙে সাড়ে ৬৯ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত জাহাজ ভেঙেছে ২০৩টি; আর স্ক্র্যাপ পেয়েছে ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টন। জাহাজ ভাঙার সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত শীর্ষে থাকলেও স্ক্র্যাপ বা পণ্যের পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ ভারত ছোট আকারের জাহাজ ভেঙেছে; আর বাংলাদেশ বড় আকারের জাহাজ ভেঙেছে বলেই কম জাহাজ ভেঙে বেশি স্ক্র্যাপ পেয়েছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে পাকিস্তান; তারা ৯৯টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছে ২২ লাখ ৫৬ হাজার টন। চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্ক জাহাজ ভেঙেছে ৯৪টি আর পণ্য পেয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টন। পঞ্চম স্থানে থাকা চীন ২০টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার টন।
পিএইচপি শিপ ব্রেকিং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, ‘আমদানি কমে যাওয়ার মূল কারণই হচ্ছে কভিডের ধাক্কা। মূলত মার্চ মাস থেকে চার মাস ব্যবসা তো বন্ধই ছিল বলা যায়। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সেই ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠলেও আগের অবস্থানে ফেরেনি।
তিনি বলছেন, ‘কভিডের কারণে অন্য গার্মেন্ট খাত প্রণোদনা পেলেও জাহাজ ভাঙা শিল্প কিন্তু কোনো প্রণোদনা পায়নি। এ ছাড়া গত বাজেটে ভ্যাট এবং এটিভি (অগ্রিম ভ্যাট) আরোপের কারণে আমরা ভারতের চেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছি। প্রতি জাহাজ কিনতে এখন টনপ্রতি তিন হাজার টাকা বাড়তি ভ্যাট দিতে হচ্ছে ফলে জাহাজ ভাঙায় খরচ বেশি পড়ছে। অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ভ্যাট অফিস থেকে সেই টাকাও আমরা ফেরত পাচ্ছি না। এসব অবস্থার পরিবর্তন না হলেও আমাদের অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হবে।
তালিকা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ জাহাজ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশে; জাহাজের সংখ্যা এবং ওজনের দিক থেকেও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। জাহাজ ভাঙার দিক থেকে বাংলাদেশ ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও শীর্ষে ছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। এর পরও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
তালিকা মতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ২৩৬টি জাহাজ ভেঙে সাড়ে ৭৮ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল। এরপর ভারত ২০০টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছিল ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টন; তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্ক ১০৭টি জাহাজ ভেঙে ১১ লাখ ৬৯ হাজার টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তান মাত্র ৩৫টি জাহাজ ভেঙে পৌনে ১০ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল। দেশের প্রথম ও একমাত্র আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড তৈরি করে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত করা পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জহিরুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ১১ শতাংশ আমদানি কমলেও বাজারে খুব বেশি সরবরাহ সংকটের সৃষ্টি হয়নি; মাঝখানে একটু সংকট থাকলেও এখন সেটি কাটিয়ে উঠেছে। জাহাজ আমদানি হচ্ছে, বাজারে কাঁচামাল সংকটও কমেছে।
রি রোলিং মিল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশ জাহাজ ভাঙা থেকে সরে আসার মূল কারণ হলো পরিবেশদূষণ। সেসব দেশে ইস্পাতপণ্য তৈরির জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল পুরনো লোহার টুকরা বা মৌলিক কাঁচামাল আকরিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে বাংলাদেশে রড তৈরির কারখানাগুলোতে এখনো কাঁচামালের একটা অংশ জোগান দেয় জাহাজ ভাঙা কারখানা। তাতেই শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে এই খাতটি। শীর্ষস্থানে উঠে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে বলে এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২৪ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে ২০২০ সালে শ্রমিক মারা গেছেন ১০ জন।
আরও পড়ুন:
অথনীতি সম্পর্কিত আরও
বৈশ্বিক ঋণ এখন রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে
০৪ মে ২০২৪
এপ্রিলে রপ্তানি আয় ৩৯২ কোটি ডলার
০২ মে ২০২৪
ফরিদপুরে ২০০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন
০১ মে ২০২৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের বৈঠক
২৯ এপ্রিল ২০২৪
২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৮ কোটি ডলার
২৮ এপ্রিল ২০২৪
নারী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বিআইসিএমে সেমিনার অনুষ্ঠিত
২৭ এপ্রিল ২০২৪