কালো টাকা অর্জনের পথ বন্ধ করতে হবে
নিউজ ডেস্ক
118
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে প্রায় ১০ হাজার ২২০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এখানে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৪৪৫ জন। আর এ খাত থেকে সরকার প্রায় সাড়ে ৯শ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। ফলে অবৈধ আয়ের দুষ্টচক্র না ভেঙে শুধু কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অর্থনীতির জন্য সুফল আনবে না। কালো টাকা অর্জনের পথ বন্ধ করতে হবে। মঙ্গলবার এসডিজিসংক্রান্ত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. শফিউল ইসলাম, সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এনবিআরের আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সাবেক সদস্য আয়কর মো. ফরিদ উদ্দিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, লিগ্যাল ইকোনমিস্ট এমএস সিদ্দিকী এবং আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান প্রমুখ।
ড. অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এ ধরনের সুবিধা সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। তিনি বিশেষ কর সুবিধা সত্যিই অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক কিনা, এ বিষয়ে এনবিআরকে গবেষণা করার পরামর্শ দেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ অন্যায্যবোধকে প্রশ্রয় দেয়। সীমিত আকারে ও স্বল্প সময়ের জন্য এ সুযোগ অর্থনীতির জন্য সহায়ক হলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতি করে। ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিধি ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সামাজিক অর্থনীতি তথা রাষ্ট্রের এখতিয়ার।
কালো টাকাকে কর দেয়ার সময় ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ সংজ্ঞায়িত করে গুরুতর অপরাধটিকে হালকা করা হচ্ছে। এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সমালোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘দুর্নীতিজাত অনুপার্জিত আয়’ এর উৎস, উপায় ও উপলক্ষ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। দুর্নীতিজাত কালো টাকা লালন করার সংস্কৃতি থেকে সরে না এলে আয় ও সম্পদ বণ্টনের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য থেকে বাংলাদেশের মুক্তি মিলবে না।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আয়কর মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, কালো টাকা আয়ের মূল কারণ হলো সুশাসনের অভাব। এ টাকা রোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অপ্রদর্শিত আয় মূলধারায় নিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ কর সুবিধার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দিলে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে সাহায্য করবে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের থেকে সৎভাবে কর দেয়া বেশি ব্যয় বহুল।
এ সুযোগের কারণে মানুষ সৎভাবে কর দিতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। মাল্টিমোড গ্রুপের পরিচালক তাবিথ আউয়াল বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ প্রশ্নবিদ্ধ।
বক্তারা বলেন, চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে মানুষ কালো টাকা বৈধ করতে উৎসাহিত হয়েছেন। কালো টাকা সাদা করার নৈতিকতা এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। অনেকদিন ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলেও চলতি বছরে এ সুবিধা গ্রহণের উল্লম্ফন নতুন করে অর্থনীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে কর আহরণ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সামাজিক আন্দোলন, তথ্যের স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিশেষ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
অথনীতি সম্পর্কিত আরও
বৈশ্বিক ঋণ এখন রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে
০৪ মে ২০২৪
এপ্রিলে রপ্তানি আয় ৩৯২ কোটি ডলার
০২ মে ২০২৪
ফরিদপুরে ২০০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন
০১ মে ২০২৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের বৈঠক
২৯ এপ্রিল ২০২৪
২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৮ কোটি ডলার
২৮ এপ্রিল ২০২৪
নারী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বিআইসিএমে সেমিনার অনুষ্ঠিত
২৭ এপ্রিল ২০২৪