ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আশা


নিউজ ডেস্ক
96

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০২১
জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আশা



ট্রাম্পের শাসনামল শেষ হয়ে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বাংলাদেশের জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে নতুন করে আশার আলো দেখছেন অনেকেই। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে এবং ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউটিআর) বেশিরভাগ বিধিমালা প্রণয়নে সফল হয়েছে সরকার। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এব্যাপারটিতে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জিএসপি সুবিধা বাতিল বহাল থেকেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাসচিব ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাধারণ পরিচালক হাফিজুর রহমানবলেন, এবছরের জুন-জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি'র বিষয়টি পুনঃমূল্যায়ন করবে। এর আগে মার্চ-এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) বৈঠক হতে পারে। "জিএসপি সুবিধা পুণরায় চালু করার ব্যাপারে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিতে পারি," বলেন তিনি।

মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তনকে সারা বিশ্বের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সদস্য মোস্তফা আবিদ খান জানান, জিএসপি সুবিধা পুণরায় ফিরে পেতে বাংলাদেশ নতুন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।

বিটিটিসি মনে করছে বাইডেন প্রশাসনও চীনের প্রতি বাণিজ্য নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আনবে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংকটের মধ্যে ভিয়েতনামে বাণিজ্যের প্রসার হওয়ায় দেশটির বাণিজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

কাঁচামালের জন্য বাংলাদেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও এধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কিছু সুবিধা পেতে পারে। তবে চীন বিশ্বের উৎপাদন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রস্থল এবং চীনের সরবরাহ ছাড়া পণ্য উৎপাদন সম্ভব নয় বলে জানান আবিদ খান।

বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ধসের তিন মাস পরে ২০১৩ সালের জুলাইতে ওবামার শাসনামলে জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়। সেবছরের নভেম্বরেই বাণিজ্য সুবিধা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

২০১৬ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের পর টিকফার বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। বৈঠকে উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, ট্রাম্পের শাসনামলে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের কোনো সুযোগ নেই। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর আবারও জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার আশা দেখা দিয়েছে।

ড. মোস্তফা আবিদ খান জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত মুক্ত বাজারে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে। তিনি জানান, এ সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রশাসন বরাবর আবেদন জানাতে পারবে। অনুমোদন দেয়া হলে তা উভয় দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে বলে মন্তব্য করেন এ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ।

বাইডেনের ক্যাথেরিন তাই-কে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনাকেও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও নিকট ভবিষ্যতে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিধিমালা শিথীল হবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।  আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক পরামর্শক হওয়ায় ক্যাথেরিন বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই আশা করা হচ্ছে।

এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রিজিওনার কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসেপ) এর সাথে পাল্লা দিতে বাইডেন প্রশাসন ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (টিপিপি) যুক্তরাষ্ট্রের পুণরায় যোগদানের ব্যাপারটি পুনঃবিবেচনা করতে পারে বাইডেন প্রশাসন।

অ্যাসোসিয়েশোন অব সাউথ এশিয়ান ন্যাশনের (আসিয়ান) ১০টি সদস্য রাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে এ জোট। এ জোটের আওতাভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের অর্ধেক টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য রপ্তানি করে।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন কৌশল নির্ধারনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাইডেন প্রশাসনের সামনে।

বারাক ওবামার পিভট টু এশিয়া নীতির হাত ধরে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য জোটে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় তা অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এখন টিপিপি'র কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে কি না তাই দেখার বিষয়। এদিকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখছে আরসেপে চীনের যোগদান।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্পর্কিত নানা বিষয় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তুলে ধরবে ও সমাধান করবে তাই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বিপত্তি। এর প্রভাব পড়বে চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিদ্যমান বাণিজ্য নীতির কারণে চীন সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ, মুদ্রা কারসাজি, দুর্বল শ্রম মানদন্ড, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগের অভাব- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় চীন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি পরিবর্তনে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে পারে বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

তবে বাণিজ্য ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা এখনো পরিষ্কার নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কার্য পদ্ধতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে বৈশ্বিক নীতি ও আইন অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট হওয়ায় এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।


আরও পড়ুন:

বিষয়: