ঢাকা বুধবার
০১ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক সঞ্চয়পত্র ডাকঘর জমি, নাকি শেয়ারবাজার?


নিউজ ডেস্ক
103

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০২১
ব্যাংক সঞ্চয়পত্র ডাকঘর জমি, নাকি শেয়ারবাজার?



শিল্পপতি ও বড় ব্যবসায়ীদের কথা আলাদা। নিজেদের টাকা তো আছেই, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণও নিতে পারেন তাঁরা। নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, কারখানাও গড়তে পারেন। কিন্তু স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন, কিসে বিনিয়োগ করবেন—এ নিয়ে ভালোই বিপত্তি আছে। অনেকে বুঝতে পারেন না, বিভ্রান্তিতে থাকেন। কারণও আছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রও যে বেশি নেই! বিশেষ করে যাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না বা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাঁদের জন্য সবার আগে আসে সঞ্চয়পত্রের নাম। বলতেই হবে, বাজারে প্রচলিত বিনিয়োগের যেকোনো বিকল্পের চেয়ে সঞ্চয়পত্রই উত্তম। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটা উচ্চসীমা আছে। একক নামে ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। যৌথ নামে অবশ্য এক কোটি টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। কিন্তু দেড় কোটি, দুই কোটি, তিন কোটি টাকা থাকলে করণীয় কী? টাকা কি বালিশের তলায় রাখতে হবে? একদমই না। নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে বিকল্প। তবে ভুল পথে পা বাড়ানো যাবে না। উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে অনেকেই ওত পেতে আছেন। অনেকেই ফাঁদ পেতে রেখেছে, পা দিলেই ধরা। তাহলে উপায়?

সঞ্চয়পত্র

একসময় সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। কয়েক বছর ধরেই দপ্তরটি আর সে ধরনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না। মানুষ এমনিতেই জেনে গেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মধ্যে চারটিই এখন প্রধান। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে। সুদের হার মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বেশি মুনাফা পাওয়া গেলেও এই সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারেন না। এটি কিনতে পারেন শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা। পরিবার সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র তিন বছর মেয়াদি। এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

ব্যাংক

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের অন্যতম বিকল্প হতে পারে ব্যাংক। দেশের ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা যায়। স্থায়ী আমানতও (এফডিআর) করা যায়। আবার মাসে মাসেও টাকা রাখা যায়। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকই হতে পারে এ বিনিয়োগের জায়গা। বুঝেশুনে, খোঁজখবর নিয়ে এবং গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে এগোলে এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও (লিজিং) কেউ টাকা রাখতে পারেন। তাঁরা সুদ বেশি দেয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সুশাসন কম থাকা বা ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের চিন্তা মাথায় আনা যাবে না। তবে ব্যাংকে টাকা রাখলে একসময় যে পাঁচ থেকে ছয় বছরেই দ্বিগুণ হতো, সেই দিন এখন আর নেই। গত বছরের এপ্রিল থেকে সুদের হার নয়-ছয়, অর্থাৎ ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার পর এফডিআরে টাকা রাখার পর দ্বিগুণ হওয়ার সময়ও বেড়েছে। তবে এখনো কোনো কোনো ব্যাংকে ৭ থেকে ১০ বছরে টাকা দ্বিগুণ হয়। কোনো কোনো ব্যাংক সময় নেয় ১২ বছর। ব্যাংকে এফডিআর রাখলে প্রথম দিন চুক্তির সময় যে সুদের হারের কথা ব্যাংক বলে থাকে, সাধারণত তার হেরফের হয় না। প্রায় সব ব্যাংকেই এফডিআর রাখার সুযোগ রয়েছে। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলো এখন আর দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর নিচ্ছে না। যেমন জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক কমপক্ষে তিন মাসের জন্য এফডিআর নেয়। দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য নেয় না। সুদের হারও ৫ থেকে ৬ শতাংশ। রূপালী ব্যাংক অবশ্য ৩ বছরের জন্যও টাকা নেয় ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ সুদে। খেয়াল রাখতে হবে, প্রতি মাসে টাকা রাখার ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প থাকে। একটিতে সুদের হার পুরোপুরি নির্ধারিত। অন্যটিতে পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখে ব্যাংক। টাকা রাখতে গেলে বেশি কিছু কাগজপত্রেরও দরকার হয় না। আবেদনপত্র পূরণ করে দুই কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি যুক্ত করে দিলে এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ব্যাংক কাজটি করে দেয়। ব্যাংকে এফডিআরের বড় সুবিধা হচ্ছে, জমা টাকার বিপরীতে জরুরি প্রয়োজনে চাইলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়।

আরও পড়ুন:

বিষয়: