ঢাকা শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

রাজস্ব বোর্ডের নজরদারিতে চীনা কোম্পানি জেডটিই কর্পোরেশন


নিউজ ডেস্ক
167

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
রাজস্ব বোর্ডের নজরদারিতে চীনা কোম্পানি জেডটিই কর্পোরেশন



চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি জেডটিই কর্পোরেশনের স্থানীয় শাখা জেটিই বাংলাদেশ- এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোম্পানিটি বাংলাদেশে নানা খাতের ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসায়ীক লেনদেন পরিচালনার সময় তারা সরকারের প্রাপ্য করফাঁকি দিয়েছে কিনা- সেটাই অনুসন্ধান করে দেখা হবে।

তদন্তের অংশ হিসেবে কোম্পানিটির সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনে জড়িত বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আলাদা করে চিঠিও দিয়েছে এনবিআর।

শীর্ষ এক আয়কর কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক আইন ও প্রচলিত বিধিমালা সমুন্নত রাখাসহ স্থানীয় সম্পদ রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। কারণ,আমাদের ধারণা নিজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে কোম্পানিটি করফাঁকির চেষ্টা চালাচ্ছে।

জেডটিই'র সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক থাকা ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছেও চিঠি পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআর- এর জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িত সকল পক্ষের ব্যাংক লেনদেন আমরা পরীক্ষা করে দেখব।'

জেডটিই কর্পোরেশন চীনের একটি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নত মানের টেলিকম সিস্টেম, মোবাইল ডিভাইস সরবরাহের পাশাপাশি নিজ গ্রাহকদের বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহ করে থাকে। টেলিকম সেবা অপারেটর, অন্যান্য ব্যবসায় জড়িত কোম্পানি এবং সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান তাদের প্রধান গ্রাহক।

হংকং এবং শেনঝেন পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বিশ্বের প্রায় ১৬০টি'র বেশি দেশে তাদের পণ্য ও সেবা বিপণন করছে।

শেনঝেন ষ্টক এক্সচেঞ্জের দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৯,০৭৩ কোটি চীনা ইউয়ান আয় করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি আইসিটি, টেলিকম এবং শক্তি উৎপাদক কোম্পানির সঙ্গে তাদের উপকরণ ও সেবা সরবরাহের চুক্তি রয়েছে।

সহকারী কর কমিশনারের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চীনা কোম্পানিটি গত কয়েক বছরে দেশের নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ লেনদেন করেছে।

এব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা  জানান, মূল প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি শাখাটিই এদেশে তাদের সিংহভাগ সেবা সরবরাহ করে থাকে। গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও তারাই করে। আর এসব সেবার আছে বিপুল চাহিদা। চাঙ্গা ব্যবসা অনুসারে তাই এদেশে নিবন্ধিত শাখাটির উপরই মোট আয় ও কর পরিশোধের দায় বর্তায়।

'চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিটি যদি পরোক্ষভাবে সেবা সরবরাহের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তাহলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের নিজস্ব কর্মী নিয়োগ দিতে হয় এবং কারিগরি টিমের মাধ্যমে সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হয়,' তিনি যোগ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে, চীনা জেডটিই কর্পোরেশন বাংলাদেশে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা করছে। এই অবস্থায় তারা দুইভাবে করফাঁকির চেষ্টা করতে পারে- একটি হলো চীনে অর্থ লেনদেনে মূল্য নির্ধারণ এবং দেশটির নানা পক্ষের কাছে সেই অনুসারে অর্থ স্থানান্তর করা।

কোম্পানিটি এসব কাজ করেছে কিনা সেটাই তদন্ত করে দেখবে এনবিআর।

ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্র থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশের প্রথম জাতীয় তথ্য কেন্দ্র (এনডিসি) চীনের এই কোম্পানিটি-ই তৈরি করে।

বেসরকারি খাতের কোম্পানির মধ্যে জেডটিই'র সবচেয়ে বড় ব্যবসা রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবি'র সঙ্গে। রবি তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি ও কারিগরি সেবা জেটিই'র কাছ থেকে কেনে।

রবি অবশ্য চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তারা কতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করেছে, বা সেগুলোর চুক্তিপত্রে উল্লেখিত মূল্য বা সেখানে কর পরিশোধের বিল অন্তর্ভুক্ত করা ছিল কিনা- সেসব ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি।

এব্যাপারে তাদের মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করা হলে, রবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ''সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি। তাই একটি বাস্তববাদী প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করার বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করছি। কারণ, এসব তথ্য বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করে টিকা থাকার সক্ষমতাও কমাবে।''

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক কোম্পানি লিমিটেডকেও একটি চিঠি দিয়েছে।

এনিয়ে যোগাযোগ করা হলে টেলিটকের সহকারী সাধারণ পরিচালক তরঘিবুল ইসলাম ঠিক কতগুলো প্রকল্প জেডটিই'র সহযোগিতায় করা হচ্ছে বা তাদের কাছে জমা দেওয়া বিলে আয়করের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছিল কিনা- সেসম্পর্কে জানাতে অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশ টেলিকম্যিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড-বিটিসিএল এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি-ও জেডটিই কর্পোরেশনের প্রধান দুই সেবা গ্রহীতা।

এনবিআর তাদের কাছেও জেডটিই সম্পর্কিত তথ্য জানাতে আলাদা করে দুটি চিঠি দেয়।

রাজস্ব কর্তৃপক্ষ জানান, প্রযুক্তি বা সেবা বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানি এবং তাদের সহযোগী এদেশীয় প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যভিত্তিক মুদ্রাপাচারে জড়িত কিনা- সেটা জানতে আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড যাচাই করে দেখা হবে।

এই লক্ষ্যে এনবিআর বাংলাদেশে কর্মরত জেডটিই এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থাগুলির (এমএনসি) জন্য একটি তদন্ত দল গঠন করেছে।

এনবিআর- এর এক কর্মকর্তা জানান, অন্যদেশে মূল কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানিতে স্থানান্তর মূল্য পরিশোধে এসব বহুজাতিক সংস্থা কম বা বেশি মূল্য দেখানোর মতো অসাধু চর্চায় জড়িত থাকতে পারে। কম মূল্য দেখিয়ে মাধ্যমে তাদের উপর আরোপিত শুল্ক ও অন্যান্য কর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়। আবার বেশি দেখালে আমদানির উৎস দেশে অর্থপাচার করা যায়।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এব্যাপারে মন্তব্যের জন্য জেডটিই বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করে। তবে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার জন্য কিছু সময় চেয়েছে।

তবে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে টিবিএস'কে জানান, নিয়ামক সংস্থা হিসেবে তারা নিয়মিতভাবে এনবিআর এর কাছে আয়কর রিটার্ন জমা দেন এবং এদেশের সকল আইন মেনেই জেডটিই তার ব্যবসা পরিচালনা করছে।


আরও পড়ুন: