ঢাকা বুধবার
০১ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লা-মেরিডিয়ানকে তালিকাভুক্ত না করার নির্দেশ


নিউজ ডেস্ক
85

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
লা-মেরিডিয়ানকে তালিকাভুক্ত না করার নির্দেশ



স্টাফ রিপোর্টার : পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানকে সরাসরি তালিকাভুক্তির প্রস্তাবনা আলোচ্যসূচি (এজেন্ডা) থেকে বাদ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দশনার পর বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অবকাঠামো খাতের কোম্পানিটিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের (সরাসরি তালিকাভুক্তি) কার্যক্রম গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড’ এর লা মেরিডিয়ান হোটেলকে (সরাসরি তালিকাভুক্তি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. মো. ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরতি এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী অবকাঠামো প্রকল্প অর্থায়নে সরকারি ও বেসরকারি তফসিলী ব্যাংকের গৃহীত ইক্যুইটি এক্সপোজারে তারল্য সৃষ্টি ও ঝুকিঁ কমানোর জন্য এ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের জন্য করণীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন। অর্থমন্ত্রীর ওই চিঠির ভিত্তিতে বেসরকারি লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিং করানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সেটা ছিল সাংঘর্ষিক। লা মেরিডিয়ানে সরকারি ৪ ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এরমধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ ও রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। বেসরকারি খাতে সরকারি ব্যাংকের এ জাতীয় অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্যই অর্থমন্ত্রী ওই চিঠি দিয়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার আরেক চিঠির মাধ্যমে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ৮ সেপ্টেম্বরের চিঠির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার পর্ষদ সভায় বিধিবহির্ভূতভাবে লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিং করানোর বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রাখা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) হস্তক্ষেপের কারণে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ডিএসইর বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। আপাতত অনিয়মের মাধ্যমে লা মেরিডিয়ানের ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়ে বিএসইসির চিঠির জবাব দেবে ডিএসই। বিএসইসির অনুসন্ধানে লা মেরিডিয়ানের ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়ে বেশকিছু অনিয়ম উঠে এসেছে। সেসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ১৫ ডিসেম্বর ডিএসইকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। যা পাওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়গুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলা হয়েছে। বিএসইসির চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রুলসে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে সব কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার সুযোগ রাখা ছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট লিস্টিং নিষিদ্ধ করেছে। তারপরেও কিভাবে বেসরকারি লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিং করা সম্ভব। এছাড়াও বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ। এছাড়া ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের। এরমধ্যে সরকারি ৪ ব্যাংকের মালিকানা ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ (সোনালী ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ ও রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ)। এই পরিস্থিতিতে হোটেলটি কিভাবে সরকারি হয়। চিঠিতে তারিখ ও রেফারেন্স না থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামো খাতের এ জাতীয় কোম্পানিকে অর্থমন্ত্রী ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা ডিএসই কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে, তাও কমিশন জানতে চেয়েছে। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার ব্যতীত অন্যকোন উপায়ে বিগত ২ বছরের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করার জন্য ডিএসইর বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে নগদে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও নগদ ব্যতীত অন্যভাবে ১৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার মূলধন বাড়িয়েছে। এ বিষয়েও বিএসইসি জানতে চেয়েছে। নিজে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করা লা মেরিডিয়ান থেকে ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩১ কোটি ২২ লাখ টাকা (এরমধ্যে প্রিমিয়াম ৬৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছে বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডে। যে কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে মাত্র ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয় করেছে। আর বাকি দুটি কোম্পানি ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত কোন আয় করেনি বলে বিএসইসি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছে। বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিটি ৬৫ টাকায় পুঁজিবাজারে ৪ দশমিক ৩৫ কোটি শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান। যা হবে মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ। এটা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম বহির্ভূত। এই লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের কথা বলা আছে। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলসে দর নির্ধারণের প্রক্রিয়া বলা আছে। সে হিসাবে দর কত হবে, তা আগেই নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন:

বিষয়: