ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভোজ্যতেলের চাপে ভোক্তা, সরকারের লাভ


নিউজ ডেস্ক
84

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
ভোজ্যতেলের চাপে ভোক্তা, সরকারের লাভ



দেশে ভোজ্যতেল সরবরাহকারীরা বলছেন, অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় তাদের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ঐ দামের উপর ভিত্তি করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে।

বেশি দামে তেল কেনার কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়লেও কর ছাড়ের পরিবর্তে উল্টো কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। তেলের দামের সঙ্গে একই হারে বেড়েছে এনবিআরের ভ্যাট ও অগ্রিম কর আদায়।

দেশে ভোজ্যতেল সরবরাহকারীরা বলছেন, এক বছর আগে প্রতি লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানিতে ব্যয় ছিল ৬৬.১১ টাকা। এতে সরকারকে কর বাবদ সাড়ে ১২ টাকা পরিশোধ করতেন তারা। বর্তমানে প্রতি লিটার তেল আমদানিতে ৭৮.৬৮ টাকা খরচের পর সরকারকে দিতে হয় ১৫.১৬ টাকা। (১ ডলারের বিপরীতে ৮৪ টাকা ধরে)

অর্থাৎ প্রতি লিটার তেল আমদানিতে এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সরকারকে প্রায় ৩ টাকা অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে। এর রেশ টানতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বিশ্ব বাজারে দামবৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে গত এক বছরে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।

চীনসহ কয়েকটি দেশ সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়ানো এবং ব্রাজিল আর্জেন্টিনার মত সরবরাহকারী দেশগুলোর সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে অন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উর্ধ্বমুখী। দেশের বাজারে এখন এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ১১৫-১২৫ টাকায়। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, এক বছর আগের তুলনায় দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলে দাম বেড়েছে ২১ শতাংশের বেশি।

দেশে ভোজ্যতেল সরবরাহকারীরা বলছেন, অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় তাদের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ঐ দামের উপর ভিত্তি করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে।

এ অবস্থায় ভোজ্যতেল আমদানিতে ট্যারিফ মুল্য নির্ধারণ করে দিয়ে তার ভিত্তিতে ভ্যাট আদায় করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আমদানি মূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপের পরিবর্তে টনপ্রতি দাম নির্দিষ্ট করে দিয়ে ঐ দামের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত থাকবে করের পরিমাণ। তাতে ভোক্তাকে অতিরিক্ত করের বোঝা টানতে হবে না।

বর্তমানে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সরল ভ্যাটহারের লিখিত সুপারিশও করেছিল।

কিন্তু এসব প্রস্তাব আমলে নেয়নি এনবিআর। এনবিআরের ভ্যাট নীতির দ্বিতীয় সচিব কাজী রেজাউল হাসান টিবিএসকে বলেন, 'এ বিষয়ে কোন পর্যালোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে এর সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে এনবিআর।'

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান টিবিএসকে বলেন, 'সয়াবিন তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এতে ভোক্তার ব্যয় কমাতে সরকারকে প্রয়োজনে ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় ধার্য করা উচিত।'

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরল করহার নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনায় টনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা কর নির্ধারনের দাবি করেছে তারা।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা  বলেন, 'শুধু আমদানির ওপর এক স্তরে নির্দিষ্ট পরিমান ভ্যাট নির্ধারণ হলে আমাদের জটিলতা দূর হবে। এটি ভোক্তার উপরও চাপ কমিয়ে আনবে।'

বাংলাদেশে সাধারণত ৮ লাখ মে টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও ১২ লাখ টন পরিশোধিত/অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি করা হয়। অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ৩০ শতাংশ বোতলজাত এবং ৭০ শতাংশ খোলা আকারে বাজারজাত করা হয়। পামতেলের ১০ শতাংশ প্যাকেটজাত এবং ৯০ শতাংশ খোলা আকারে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন।


আরও পড়ুন:

বিষয়: