ঢাকা শনিবার
০৪ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক


নিউজ ডেস্ক
190

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক



এখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিসিক শিল্পনগরী। এখন সবকটি কারখানাতেই শতভাগ শ্রমিক কাজ করছেন। কারখানাগুলোতে এখন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। তবে সিলিকেট ও মেটালসহ কিছু পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ওইসব পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়েনি।

আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে করোনভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিসিক শিল্পনগরী। শ্রমিক সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি কারখানাগুলোতে এখন উৎপাদনও বেড়েছে আশানুরূপ হারে। শিল্পনগরীতে উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছাড়া সবকটিরই বাজারে চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে মহামারিতে হওয়া লোকসান কাটিয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকার ২১.৯৮ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বিসিক শিল্পনগরীতে তেল, সাবান ও ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা রয়েছে। আর এসব কারখানায় কাজ করেন তিন হাজারেওর বেশি শ্রমিক। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই অধিকাংশ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দেয়ায় কারখানাগুলোতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এর ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। এছাড়া বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমতে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরীতে আর্ধিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুইশত কোটি টাকা বলে জানিয়েছে বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৮৭-৯৮ সালে স্থাপিত বিসিক শিল্পনগরীতে অনুমোদিত ৭২টি কারখানার মধ্যে বর্তমানে ৬০টি সচল রয়েছে। এর মধ্যে আটটি আটা-ময়দা, চারটি সেমাই, তিনটি বেকারি, চারটি মুড়ি, চারটি তেল, তিনটি সাবান, চারটি মেটাল, পাঁচটি সিলভার, দুইটি পাইপ, দুইটি তারকাটা, দুইটি ওষুধ ও চারটি সিলিকেট কারখানা রয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকেই সংকটে পড়ে বিসিক শিল্পনগরী। শ্রমিকরা কাজে আসা বন্ধ করে দেয়ায় কারখানাগুলোর উৎপাদন ৫০ শতাংশে নেমে আসে। আর ছোট কারখানাগুলোর উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমতে থাকে। এতে করে বড় ধরনের লোকসানে পড়েন ব্যবসায়ীরা।

তবে এখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিসিক শিল্পনগরী। এখন সবকটি কারখানাতেই শতভাগ শ্রমিক কাজ করছেন। কারখানাগুলোতে এখন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। তবে সিলিকেট ও মেটালসহ কিছু পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ওইসব পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়েনি।

বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্যের চাহিদা কমে যায়। এছাড়া টানা লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকটের ফলে দ্বিগুণ ভাড়ায় কাঁচামাল পরিবহন করতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য ঠিকমতো ডেলিভারী করা যায়নি। অথচ শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সকল ব্যয়ই মেটাতে হয়েছে কারখানা মালিকদের। এতে করে প্রতিদিন শিল্পনগরীতে অন্তত এক কোটি টাকার ব্যবসায়ীক ক্ষতি হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিছু পণ্য ছাড়া সব পণ্যের কারখানায় উৎপাদন আশানুরূপ হারে বেড়েছে। শ্রমিকরাও ঠিকমতো কাজে আসছেন।

বিসিক শিল্পনগরীর শ্রমিক সর্দার মো. শাহীন আলম জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বেশিরভাগ শ্রমিক কাজে আসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সব কারখানাতেই শতভাগ শ্রমিক কাজ করছে। কোনো শ্রমিকই বেকার বসে নেই, সবাই কাজ করছে।

মেসার্স আমানত মেজর ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপক আব্দুল হাফিজ মিয়া বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট এবং বাজারে চাহিদা কম থাকায় উৎপান কম ছিল। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ কারখানার সকল ব্যয়ই মেটাতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কারখানায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি টাকা'।

'এখন কারখানার উৎপাদন বাড়ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ টন আটা-ময়দা ও ৩০-৩৫ টন ভূষি উৎপাদন হতো। এখন দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ টন আটা-ময়দা ও ১০ ভূষি উৎপাদন হচ্ছে কারখানায়'- যোগ করেন আব্দুল হাফিজ মিয়া।

ইউসূফ কেমিক্যালের ব্যবস্থাপক রিটন সাহা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে দৈনিক অন্তত ৩০ টন সিলিকেট উৎপাদন হতো কারখানায়। করোনাভাইরাসের কারণে চাহিদা কমতে থাকায় উৎপাদন অর্ধেক কমে যায়। এখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সিলিকেটের তেমন চাহিদা নেই। শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হবে- সেজন্য এখন গড়ে প্রতিদিন ১৫ টন সিলিকেট উৎপাদন হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে যদি চাহিদা বাড়ে এবং ব্যবসা ভালো হয়- তাহলে হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।

মেসার্স মাহি মেটাল ইন্ডাস্ট্রির সত্ত্বাধিকারী মো. জহিরুল হক বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে আমার কারখানায় অন্তত অর্ধকোটি টাকার লোকসান হয়েছে। ব্যবসার মাধ্যমেই এই লোকসান কাটাতে হবে। কারখানায় এখন স্বাভাবিক সময়ের মতোই উৎপাদন হচ্ছে। তবে বাজারে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কম। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে হয়তো ব্যবসা আগের জায়গায় ফিরে যাবে'।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের শিল্পনগরীরে অন্তত দুইশত কোটি টাকার ব্যবসায়ীক ক্ষতি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। কিছু পণ্য ছাড়া বাকিসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। গত এক মাস ধরে কারখানাগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকলে উৎপাদনও বাড়বে'।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর শ্রমিক সংকটের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন কমে যায়। এছাড়া বাজারে পণ্যের চাহিদাও কম ছিল। কিন্তু এখন পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে, বাজারে চাহিদাও রয়েছে। ধীরে-ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে বিসিক শিল্পনগরী'।


আরও পড়ুন:

বিষয়: