ঢাকা রবিবার
০৫ মে ২০২৪
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহামারির চক্রে ক্যালেণ্ডার, ডায়েরি ও নোটপ্যাডের ব্যবসায় দুর্দিন


নিউজ ডেস্ক
123

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
মহামারির চক্রে ক্যালেণ্ডার, ডায়েরি ও নোটপ্যাডের ব্যবসায় দুর্দিন



ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে মার্চ-সেপ্টেম্বর সময়ে তাদের ব্যবসা প্রায় শূন্যে নেমে গিয়েছিল। ক্যালেন্ডার-ডায়েরির মওসুম চলছে এখন। তাতেও ব্যবসা ২০ শতাংশ পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়েছে। তাদের আশা, জানুয়ারি নাগাদ তা আরো বেড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উঠবে। এরপর আবারো ব্যবসায় ধ্বস নামতে পারে।
  • বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিক্রি
  • নভেম্বর-জানুয়ারি পিক সময়
  • ব্যবসা স্বাভাবিক হয়েছে ২০ ভাগের মতো
  • বন্ধ হয়ে গেছে ৪০ প্রতিষ্ঠান
  • চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ
  • বিয়ে-অনুষ্ঠানাদির কার্ড বিক্রি তলানীতেবছরের শেষে এসে খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও নোট প্যাডের ব্যবসা। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি- এই তিন মাস এই খাতের ব্যবসার পিক সময়। এ কারণেই এই ঘুরে দাঁড়ানো। ফেব্রুয়ারি থেকে আবারো কোভিড মহামারির মহামন্দার আশংকায় আছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে মার্চ-সেপ্টেম্বর সময়ে তাদের ব্যবসা প্রায় শূন্যে নেমে গিয়েছিল। ক্যালেন্ডার-ডায়েরির মওসুম চলছে এখন। তাতেও ব্যবসা ২০ শতাংশ পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়েছে। তাদের আশা, জানুয়ারি নাগাদ তা আরো বেড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উঠবে। এরপর আবারো ব্যবসায় ধ্বস নামতে পারে। বাংলাদেশ প্রিন্টিং প্রোডাক্টস এসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে ক্যালেণ্ডার, ডায়েরি ও নোটবুকের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। এ খাতে কর্মসংস্থান প্রায় দুই লাখ। কোভিড সংক্রমণ শুরুর আগে বছরে গড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা করতেন তারা। এই ব্যবসায় বাজারে ক্যালেন্ডারের ভাগ ৩০, ডায়েরি ৩০, নোটপ্যাড ২০ এবং বিয়ের কার্ড ২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, নোট প্যাড ও বিয়ে-অনুষ্ঠানাদির কার্ডের ব্যবসার ৭০ শতাংশেরই বেশি হয় এই পিক সময়ে। পেপার খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের শেষে ক্যালেণ্ডার, ডায়েরি ও নোটপ্যাডে পেপার ব্যবহৃত হওয়ায় এই মওসুমে তাদের ব্যবসাও ভালো হয়। তবে বছরজুড়ে তারা বড় ধরনের সংকটে ছিলেন। ঢাকার আমিন প্রোডাক্টসের কর্ণধার আমিন উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত বছর এই সময়ে দুই লাখের বেশি ক্যালেন্ডার ও পঞ্চাশ হাজারের বেশি ডায়েরি বিক্রি করেছি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত গত বছরের চার ভাগের এক ভাগও অর্ডার পাইনি'। 'গতবারের অর্ধেক ব্যবসা এবার হবে কীনা, সেটা নিয়ে সন্দেহে আছি। বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করার প্রভাব এই খাতের ব্যবসায় পড়েছে'- জানান তিনি। বসুন্ধরা পেপার মিলসের কোম্পানী সচিব মাজেদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও নোটবুকের কারণে বছরের শেষ দিকে কাগজের ভালো ব্যবসা হয়। কোভিডের কারণে পেপার খাতের ব্যবসা কম। পেপারের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এই খাতের কোম্পানীগুলো ধুঁকছে।" ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও নোটপ্যাড ছাপানোয় দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টস। এই প্রতিষ্ঠানটিতে সব মিলিয়ে দেড়শ কর্মী কাজ করেন। কোভিড সংকটে বগুড়া, খুলনা, ময়মনসিংহের শোরুম বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও অবশিষ্ট কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদ। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বাংলা নববর্ষের সময় সাধারণত তারা ২০-২৫ লাখ টাকার বাংলা ক্যালেন্ডার বিক্রি করেন থাকেন। কিন্তু গত বৈশাখে বিক্রি হয়েছে তিন-চার লাখ টাকার ক্যালেন্ডার। তিনি বলেন, "প্রতি বছর বিভিন্ন সাইজের ৩০-৩৫ লাখ ইংরেজি ক্যালেন্ডার ছাপানোর চাহিদা থাকে। আর ডায়েরি ৫০-৬০ হাজার। সেখানে এবার দশ হাজার ডায়েরি ছাপার চাহিদা পেয়েছি। ক্যালেন্ডারের শুধু স্যাম্পল তৈরি করে রেখেছি কিন্তু কোনো চাহিদাপত্র নাই। কেউ অর্ডার দিলে বানিয়ে দেব।" আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'গত বছর এই সময়ে আমার দোকানে অর্ডারের ধুম পড়ে যেত। দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না। কিন্তু এখন দিনে ৭-৮টা অর্ডার আসে। গত বছর আমরা দুই কোটি টাকার ব্যবসা করেছি। এবার ৫০ লাখ পার হয় কীনা সন্দেহ আছে।' ফকিরাপুলের শান্তা ট্রেডার্সের কর্ণধার মজিদ মিয়া বলেন, তার দুটি দোকান ছিল। এখন একটি। আরেকটিতে  বিরিয়ানির দোকান দিয়েছেন তিনি। বিয়ের কার্ডের ব্যবসায়ীদের দুর্দিন দেশ স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ফিরে এলেও বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানাদি খুব একটা হচ্ছে না। এ কারণে চরম দু:সময় পার করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। ১৯৮০ সালের দিকে ব্যবসা শুরু করে আইডিয়াল প্রোডাক্টস। বিয়ের কার্ড ছাপানোতে বাজারে সবচেয়ে বেশি সুনাম এই প্রতিষ্ঠানটির। আইডিয়ালে জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তাদের ১৪টি শোরুমের মধ্যে ১০টিই এখন বন্ধ। আগে প্রতিদিন পল্টন শাখাতেই ৮০০-১০০০ বিয়ের কার্ডের অর্ডার পাওয়া যেত। কিন্তু এখন পাওয়া যায় ৫০টার মতো। তিনি বলেন, "পল্টন শোরুমে আগে ১০ জন কর্মচারী ছিল। ছয়জনকে বাদ দিয়ে ৪ জন দিয়ে এখন শোরুম চালানো হচ্ছে। এ অবস্থা শুধু আমাদের নয়। যারা বিয়ের কার্ড ছাপানোর সাথে জড়িত তাদের সবারই এক অবস্থা।" ব্যবসায় মন্দার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও কর্মীদের চাকুরিচ্যুতির তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রিন্টিং প্রোডাক্টস এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কখনো ভাবিনি ব্যবসায় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। করোনায় এই খাতের চল্লিশটির মত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচশ'র মত লোক চাকরি হারিয়েছে।'

আরও পড়ুন:

বিষয়: