ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কিন্তু সেই হারে বাড়ছে না আয়করদাতা ও আয়করের পরিমাণ


নিউজ ডেস্ক
82

প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কিন্তু সেই হারে বাড়ছে না আয়করদাতা ও আয়করের পরিমাণ



দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে ব্যাংকের বড় অঙ্কের আমানতকারীর সংখ্যাও। কিন্তু সেই হারে বাড়ছে না আয়করদাতা ও আয়করের পরিমাণ। এখন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশের কিছু বেশি মানুষের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেক টিআইএনধারীই রিটার্ন জমা দেন না। কর আহরণের এই চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আরো হতাশার চিত্র ফুটে ওঠে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে জিডিপির তুলনায় কর আহরণে বাংলাদেশ রয়েছে সপ্তম স্থানে। যদিও সর্বশেষ (২০১৯-২০) সালে কিছুটা বেড়েছে, তার পরও তা ১০ শতাংশের ওপরে উঠতে পারেনি। অথচ প্রতিবেশী দেশ নেপালের জিডিপির তুলনায় কর আহরণ হার প্রায় ২১ শতাংশ। প্রতিবছরই বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার থেকে পিছিয়ে থাকছে রাজস্ব আহরণ। যদিও এনবিআর ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক থেকে মোট রাজস্ব আদায় করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংগ্রহকারী সংস্থা ও করদাতা উভয় পক্ষেই সমস্যা রয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের লোকবল ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সংকটের পাশাপাশি করযোগ্য মানুষের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও আয়কর আদায় কম হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন রাজস্ব বোর্ডসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রিটার্ন জমার পর হয়রানি, কর দেওয়ায় জটিলতা, আয়করের উচ্চহার এবং সঠিক প্রচারের অভাবেই মানুষ রিটার্ন দেওয়া এড়িয়ে যায়। প্রতিবছরের মতো চলতি বছরও বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আয়কর আদায় অনেকটাই কঠিন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই প্রতিবছর আয়করসহ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ হয় না। এ বছর করোনার কারণে নিশ্চিতভাবেই সেই ঘাটতি আরো বাড়বে। আমাদের যে অর্থনীতি তাতে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ কর দিতে পারে। কিন্তু বাস্তাবে রিটার্নই দিচ্ছে মাত্র ২০-২২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে উৎস কর কেটে রাখা রিটার্নই বড় একটা অংশ। করযোগ্য মানুষের কর না দেওয়া, বড় কতাদাতাদের ফাঁকির প্রবণতা, রাজস্ব বোর্ডের সীমাবদ্ধতা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কর না দেওয়ায় আয়করের লক্ষ্য পূরণ হয় না।’   অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, করোনার মধ্যেও দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছর জুন শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৩৭ জন। যা এর আগের জুন মাস পর্যন্ত ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে দুই হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা এর আগের বছর ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫৫ ডলার সমপরিমাণ। বিদায়ি বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ৮.১৫ শতাংশ।   কর দেওয়া ১ শতাংশ মানুষ রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, দেশে টিআইএন আছে প্রায় ৪৫ লাখ নাগরিকের। যদি দেশের জনসংখ্যা ১৯ কোটিও ধরা হয় তবে টিআইএন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ মানুষের। কিন্তু বছর শেষে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেন এর অর্ধেক ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ। তাদের মধ্যে সাত লাখ থেকে আট লাখ আবার সরকারি কর্মকর্তা। প্রতি মাসে বেতনভাতা প্রদানের সময়ই ‘পে রোল ট্যাক্স’ কেটে রাখা হয়। অন্যদিকে যাঁরা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেন, তাঁদের প্রায় ১০ শতাংশ শূন্য রিটার্ন জমা দেন। অর্থাৎ এই ১০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন না। সেই হিসাবে দেশে আয়কর দেন ১ শতাংশেরও কম মানুষ।   কর ফাঁকি ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে মুনাফা ও সম্পদ স্থানান্তর করে বাংলাদেশ থেকে বছরে পাঁচ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছেন বিভিন্ন বহুজাতিক কম্পানি ও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা। কর ফাঁকির এই পরিমাণ মোট কর রাজস্বের ৩.৪৬ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ৬১.৮৯ শতাংশ ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ১৪ শতাংশের সমপরিমাণ। তারা হিসাব করে বলছে, এই অর্থ তিন লাখ ৯২ হাজার ৩৯৮ জন নার্সের বার্ষিক বেতনের সমান। গত ২০ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী কর ন্যায্যতা নিয়ে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস-২০২০ : ট্যাক্স জাস্টিস ইন দ্য টাইম অব কভিড-১৯’ নামের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রাক্কলন রয়েছে।   চলতি বছরের সর্বশেষ চিত্র চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা কম। তবে এই অর্থ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪৭ কোটি টাকা বেশি। সেই হিসাবে চার মাসে মোট রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.১৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য মোট রাজস্ব লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আয়কর খাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৭১০ কোটি ১১ লাখ টাকা, যেখানে আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৯১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে যে আঘাত লেগেছে তার মধ্যে এই প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, ‘যদিও লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৮৭ হাজার এক কোটি টাকা। সে হিসাবে আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছি। তবে করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অর্থনীতির যে অবস্থা, এর মধ্যে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ১.১৪ শতাংশ এগিয়ে আছি, সেটা আশাব্যঞ্জক। আশা করছি ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরো ভালো হবে।’

আরও পড়ুন:

বিষয়: