ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

২০২১ সালেও চাহিদা বৃদ্ধির আশা দেখছে না ওপেক


নিউজ ডেস্ক
83

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২০
২০২১ সালেও চাহিদা বৃদ্ধির আশা দেখছে না ওপেক



বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় চাহিদা বৃদ্ধি। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা যে হারে কমিয়েছে তা সংকটে ফেলেছে পুরো শিল্পকে। ২০২১ সালে গিয়েও জ্বালানি তেলের চাহিদা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়বে না, এমনটাই মনে করছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। সংস্থাটির মতে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ও ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা আগামী বছর জ্বালানি পণ্যটির কাঙ্ক্ষিত চাহিদা বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

ওপেকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক গড় চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক ৯ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে। চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছর জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় চাহিদা ৬২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার আগে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির এ হার আরো বেশি হবে বলে আশা করেছিল ওপেক। জোটটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক গড় চাহিদা বৃদ্ধির হার আগের প্রাক্কলনের তুলনায় দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ধাক্কা খেতে শুরু করে। ওই সময় চীন ছাড়িয়ে ইউরোপের দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছিল করোনা সংক্রমণ। পরে পুরো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে তছনছ করে করোনার বিশ্বজুড়ে বিস্তার ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করে। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে চলে যায় একের পর এক দেশ। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। থমকে যায় যোগাযোগ ও পরিবহন খাত। স্থবির হয়ে পরে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা কমতে শুরু করে। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা যে হারে পতন দেখা গেছে, তা ইতিহাসে কখনই ঘটেনি। বিশেষত দেশে দেশে যানবাহন বন্ধ থাকা ও কারখানাগুলোর কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসায় জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা হু হু করে কমতে শুরু করে।

চাহিদা পতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামও কমতে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জ্বালানি পণ্যটির ব্যারেল শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। অর্থাৎ, পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালানি তেলের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবহন ব্যয়ও ক্রেতাদের পরিশোধ করেছে। জ্বালানি পণ্যটির ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

নজিরবিহীন এ পরিস্থিতিতেও আশার কথা শুনিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, আগামী বছর ঘুরে দাঁড়াতে পারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি। বাড়তে পারে দাম। সে অনুযায়ী পূর্বাভাসও দিয়েছিল ওপেকসহ বিভিন্ন সংস্থা। তবে বছরের শেষ ভাগে এসে বাস্তবতা বিবেচনায় সে অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে তারা। কেননা এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে। এর পর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লাগতে পারে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে লকডাউন আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের চাহিদায় ফের ধস নামাবে। ফের স্থবির করে দিতে পারে অর্থনীতির গতি। ফলে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিশ্ব বাজার।

৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর ওপেকের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রকাশিত জোটের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির পথে হাটছে। এর সুস্পষ্ট প্রভাব পড়বে জ্বালানি তেলের বাজারে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে চলতি বছরের মতো আগামী বছরও জ্বালানি পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি তুলনামূলক মন্দা ভাবের মধ্য দিয়ে যাবে।


আরও পড়ুন:

বিষয়: