ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা অব্যাহত মাদার টেক্সটাইলের, সরকারের সহযোগিতা কামনা


নিউজ ডেস্ক
84

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা অব্যাহত মাদার টেক্সটাইলের, সরকারের সহযোগিতা কামনা



মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান : মাদার টেক্সটাইল লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত কোম্পানিটি দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন কোম্পানিটিকে ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। আর এর নেতৃত্বে রয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলিজা সুলতান। গাজীপুরে ৭৫ বিঘার ওপর প্রতিষ্ঠিত মাদার টেক্সটাইল। কারখানাটিতে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত প্রায় আরো ৬ হাজার পরিবার। নানামুখী সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে আয়ের উৎস হারিয়েছিল প্রায় আট থেকে নয় হাজার পরিবার। যারা এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল ছিল। অবশেষে এই প্রতিষ্ঠানটির বেহাল অবস্থা থেকে হাল ধরেছেন মাদার টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আহমেদের পুত্রবধু এলিজা সুলতান। স্বামী আর শশুর যখন অসুস্থ। ব্যাংক ঋণের চাপে যখন বন্ধ হয়ে গেছে এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি। হাজার হাজার পরিবার যখন ছিল চাকরী হারিয়ে নিরাশ তখনই হাল ধরেছেন তিনি। একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা পরিচালনা কঠিন কিছু না হলেও বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে দুই বছর বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে আবার দাঁড় করানো সহজ কাজ নয়। যেটা তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর করেছেন। স্টক টাইমসের সঙ্গে একাধিকরা এবিষয়ে কথা বলেন এলিজা সুলাতান। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকের টাকা সময়মতো শোধ করতে পারিনি। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের কোনো উদ্দেশ্যও আমাদের নেই। গ্যাস না পাওয়া, ব্যাংকের অসহযোগিতা আর বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমরা ঋণ শোধ করতে পারিনি। তবে আমরা ঋণ শোধ করব। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি জানান, আমরা ব্যাংকের বর্তমানে ঋণ পরিশোধে নিয়মিত হয়েছি। আমাদেরকে পরিশোধ করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি ঘুরে দাঁড়ানোর। আমাদের পরিকল্পনাগুলো আমরা ব্যাংককে জানিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। ব্যাংকের সব ঋণ পরিশোধ করতে পারবো। তিনি প্রতিষ্ঠানটির শুরুর দিকের বিষয়গুলো নিয়ে বলেন, নব্বইয়ের দশকে দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন ছিলেন তার শশুর মাদার টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আহমেদ। ১৯৯০ সালে সুলতান আহমেদ নিজেই একটি টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন মাদার টেক্সটাইল। এলিজা বলেন, ১৯৯৩, ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে চার দফায় নিজের বিনিয়োগ ২৪৬ কোটি টাকার সঙ্গে রূপালী ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কারখানা সম্প্রসারণ করেন সুলতান আহমেদ। ব্যবসার বিপদ শুরু হয় কারখানায় গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায়। এলিজা সুলতান বলেন, ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত প্রকল্পে গ্যাস–সংযোগ না পাওয়ায় কারখানা বন্ধ ছিল। নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর এক দফায় তুলা আনা হয়েছিল, যা কারখানা চালু না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। কারখানা বন্ধ থাকলেও ব্যাংকঋণের সুদ বাড়তে থাকে। নতুন যন্ত্রপাতি অকার্যকর হতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যাংক ২০০১ সালে ঋণপত্র খোলা সীমিত করে দেয়, যা অব্যাহত ছিল ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঋণপত্র খোলা স্থগিত করে রাখা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। ২০১০ সালের পর আরেকটি বড় ধাক্কা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে। ওই বছর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তুলা ও সুতার দাম ছিল অস্থির। এদিকে ব্যাংকঋণ, কারখানা বন্ধ থাকা, আড়াই হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে বিপুল অর্থের জোগান দেওয়া ইত্যাদি নানা দুশ্চিন্তায় ২০১০ সাল থেকে অসুস্থ সুলতান আহমেদ। গত বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়েন সুলতান আহমেদ। এরপর প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি বিদেশে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুলতান আহমেদের একমাত্র ছেলে শোয়েব সুলতান ১২ বছর ধরে ফুসফুসের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। ফলে তাঁর পক্ষেও কখনো কোম্পানির দায়িত্বে যুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি। যখন স্বামী এবং শশুর কেউই দুঃসময়ে অসুস্থতার কারণে পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। তখন এলিজা সুলতানের সাথে সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন তারই স্নাতক পড়ুয়া ছেলে সোহেল আহমেদ সুলতান। দায়িত্ব নিয়েই কারখানা চালু করেন এলিজা সুলতান। কারখানার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমান। কারখানাটিকে আবারও দাঁড় করাতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এলিজা সুলতানের এখন বড় চিন্তা কীভাবে ব্যাংকের ঋণ শোধ করবেন। তার পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। এলিজা জানান, বর্তমানে মাদার টেক্সটাইলের ব্যাংকে ঋণের পরিমান প্রায় ৭২৭ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে ব্যাংকের আসল টাকা ৪৪৬ কোটি টাকা। বাকি ২৬৩ কোটি টাকা অপরিশোধিত আরোপিত সুদ। এর বাইরে অনারোপিত সুদ রয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা। এটা তিনি ব্যাংকের কাছে মওকুফ চেয়েছেন। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠন বন্ধ হয়ে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পরে। তাই একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাক সেটা কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। আমরা আশা করবো কোম্পানিটিকে ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।

আরও পড়ুন:

বিষয়: