ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিকাশের মুনাফায় ধস


নিউজ ডেস্ক
68

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৯
বিকাশের মুনাফায় ধস



স্টাফ রিপোর্টার : মুনাফায় ধসের মুখে পড়েছে শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ। ২০১৮ সাল শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা ৫৮ শতাংশের বেশি কমেছে। এতে বিকাশের মুনাফা নেমেছে প্রায় ২০ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়। মূলত সেবা, পরিচালন-ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়-প্রচারণা ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই হোঁচট খেয়ে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বিকাশ। যদিও গত বছর প্রায় ২৪ শতাংশ আয় বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানিটির। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নতুন বিনিয়োগকেই মুনাফা কমার জন্য দায়ী করছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে ২০১৮ সালে দুই হাজার ১৭৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা আয় করেছে বিকাশ লিমিটেড। এর মধ্যে প্রায় ২৫১ কোটি ৯১ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আর্থিক বছর শেষে বিকাশ-এর আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। ওই বছরে সেবা প্রদান, পরিচালন-ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়-প্রচারণাসহ তিন খাতেই প্রায় এক হাজার ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। এর জের ধরে আর্থিক বছর শেষে বিকাশ-এর পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকায়, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৮১ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। তবে ব্যাংকের আমানতের সুদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা কিছুটা বেড়ে সর্বশেষ প্রায় ২০ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের আর্থিক বছরের তুলনায় তা ৫৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরে বিকাশ-এর মোট আয় ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে মূসক খাতে ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সেবা প্রদান ব্যয় ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ, পরিচালন-ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৩৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং বিক্রয়-প্রচারণার ব্যয় ৭৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। আয়ের তুলনায় দুই খাতে বাড়তি ব্যয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিপাকে ফেলেছে। নতুন-পুরনো প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে গিয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিক্রয়-প্রচারণায় ব্যয় বাড়িয়েছে। বাড়তি ব্যয়ের কারণে মুনাফার দিক থেকে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে বিকাশ। এর আগে ২০১৪ সালে প্রায় ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগ ব্যয়কে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। আলাপকালে বিকাশ-এর করপোরেট কমিউনিকেশনসের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সমাপ্ত আর্থিক বছরে বিকাশের কর-পরবর্তী মুনাফা কমলেও রাজস্ব আয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে গ্রাহকদের আরও উন্নত প্রযুক্তি ও সেবা দেওয়ার জন্য এ খাতে নতুন বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার প্রতিফলন আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে। গ্রাহকদের লেনদেন আরও সহজ, ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ করার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিকাশ-এর নতুন অনেক সেবাও যুক্ত হয়েছে।’ এদিকে মুনাফায় পিছিয়ে পড়লেও গত পাঁচ বছরে বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা ৯৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি ৫৬ লাখ, যা ২০১৮ সাল শেষে তিন কোটি ৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে বিকাশ-এর দৈনিক গড় লেনদেনও বেড়েছে। ২০১২ সালে ওই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। আর ২০১৮ সাল শেষে দৈনিক গড় লেনদেনের অঙ্ক ৫৩ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে বিকাশের দৈনিক গড় লেনদেন ৩৪১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহক ও গড় লেনদেন বাড়লেও পাঁচ বছরের ব্যবধানে কর-পরবর্তী মুনাফার প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ২০১২ সালে প্রায় ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল বিকাশ, যা ২০১৮ সাল শেষে প্রায় ১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় নেমেছে। অর্থাৎ টাকার অঙ্কের হিসাবে এখন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে বিকাশ। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের মানি ইন মোশন এলএলসি’র যৌথ উদ্যোগে পথচলা শুরু করে বিকাশ। বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। রকেট, ইউ ক্যাশ, এম ক্যাশ ও মাই ক্যাশসহ প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বাজারের অর্ধেকের বেশি দখল করেছে বিকাশ। বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন ও বিকাশের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য লেনদেনের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’ চালু হওয়ায় তা বিকাশ-এর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন:

বিষয়: