ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে অনুমোদন নয়


নিউজ ডেস্ক
69

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে অনুমোদন নয়



ডেক্স রির্পোট: তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এজন্য নতুন করে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে পরিচিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদনের ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত আরোপ হচ্ছে। ৪০০ মেগাওয়াটের কম সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হবে না বলে জানা গেছে। যদিও এখনো বেশকিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন ও দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানিসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৯ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভ বাদে)। এই ১০ বছরে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র যোগ হয়েছে ১০০টির বেশি। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশির ভাগই ব্যয়বহুল জ্বালানি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক। ৬৭টি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশই আবার ভাড়াভিত্তিক কিংবা ব্যক্তি খাতের। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে সাত থেকে আট গুণ বেশি। ক্যাপাসিটি চার্জ, জ্বালানি ব্যয়সহ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এমন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা যত বাড়ছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসানও তত বড় হচ্ছে। তবে গত ১০ বছরে যেসব বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, চলতি বছর থেকে এগুলো উৎপাদনে আসা শুরু করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে নতুন করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, ব্যয়বহুল সত্ত্বেও জরুরি চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিতে হয়েছে। তবে যেহেতু আমাদের কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এ বছর থেকে উৎপাদনে আসা শুরু করছে, তাই নতুন করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন করে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার পরিকল্পনা নেয়া হলেও বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাতে যে ১৩ হাজার ৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন তার মধ্যে ২৬টিই ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৪ মেগাওয়াট। ৯১১ মেগাওয়াট ছাড়া যার পুরোটাই ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বর্তমানে তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১৫ বছর মেয়াদি তেলভিত্তিক যেসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে, চুক্তির মেয়াদ শেষে এসব কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশল মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ শেষে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবির কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজন ও পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে নতুন করে চুক্তি হতেও পারে। বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৩ টাকা ৭ পয়সা। কিন্তু ফার্নেস অয়েলভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৯ থেকে ১১ টাকা। ডিজেলভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৭ টাকা। এদিকে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে ৪০০ মেগাওয়াটের কম ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন কোনো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন না দেয়া। সরকারি কিংবা বেসরকারি যেকোনো খাতে নতুন করে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ৪০০ মেগাওয়াটের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। এ বিষয়ে বিপিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, কয়লাভিত্তিক ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে সাব-ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যদিও সুপার-ক্রিটিক্যাল ও আল্ট্রাসুপার-ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের নজিরও রয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ক্রমেই বড় ধরনের অসমতা তৈরি হচ্ছে। পিক সিজন তথা বেশি চাহিদার সময় এখন পর্যন্ত দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে অফ পিক সিজনে তথা শীতকালে সর্বোচ্চ চাহিদা সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। শীতকালে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালেও পাঁচ-ছয় হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়। বসিয়ে রাখলেও ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় বিপিডিবিকে। সূত্র: বণিক বার্তা।

আরও পড়ুন:

বিষয়: