ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ববাজারে হিমায়িত চিংড়িজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাস, কমছে চিংড়ি রফতানি


নিউজ ডেস্ক
94

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০১৮
বিশ্ববাজারে হিমায়িত চিংড়িজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাস, কমছে চিংড়ি রফতানি



স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ববাজারে হিমায়িত চিংড়ি ও চিংড়িজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দেশের চিংড়ি শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতার  অধিকাংশেই অব্যবহূত। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে। বহির্বিশ্বে চাহিদা মন্দার কারণে বিগত ও চলতি বছর বন্ধ হয়ে গেছে এ খাতের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান। রফতানিনির্ভর শিল্পটি বিশ্ববাজারে নেতিবাচক পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে বিপাকে পড়েছে। খুলনা অঞ্চলে গড়ে ওঠা চিংড়ি খাতের শতাধিক কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ৬৫টি। চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ, বেচাকেনা, প্রক্রিয়াকরণ এবং রফতানি কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এদের অধিকাংশই বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সম্ভাবনাকে ঘিরে গত কয়েক দশকে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠে চিংড়ি চাষ ও উৎপাদন শিল্প। হোয়াইট গোল্ড হিসেবে পরিচিতি চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শতাধিক কোম্পানি। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ি খাতে উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। এদিকে বিশ্ববাজারে বাগদার পরিবর্তে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বাড়লেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয় নেমে এলে বিপাকে পড়বে আর্থিক খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান। খুলনা অঞ্চলে চিংড়ি শিল্পে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ খাতের কারখানাগুলো রুগ্ণ হলে বিপাকে পড়বে সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেকগুলো ব্যাংক। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ খাতে রফতানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। কয়েক বছর ধরে স্থবিরতার পর।  বর্তমানে চিংড়ি খাত হয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে নিম্নমুখী। ফলে একদিকে যেমন দেশের রফতানি আয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে হিমায়িত খাদ্য রফতানি কারখানাগুলোও দিন দিন রুগ্ণ থেকে রুগ্ণতর হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিল্পোদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে পড়বেন। শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও কৃষক বেকার হয়ে পড়বেন। গত বছর হঠাৎ করে গলদা চিংড়ির দাম পড়ে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। আবার চলতি মৌসুমে হঠাৎ বাগদার দামও পড়ে যায়। উপরন্তু ক্রেতা দেশগুলো থেকে অর্ডারের পরিমাণও অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। আমাদের প্রতিযোগী প্রতিবেশী দেশগুলো এরই মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভেনামির মাধ্যমে বাড়তি উৎপাদনশীল জাত চাষ করে রফতানি বহু গুণ বাড়িয়েছে। ওই চিংড়ির হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ১০-১৫ টন। কিন্তু আমাদের দেশে উৎপাদন হচ্ছে তিন-চার টন। ভেনামি জাতের চিংড়ির কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর উৎপাদন খরচও আমাদের তুলনায় অনেক কম। এ কারণে দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে কেজিপ্রতি ২-৩ ডলার কম দামে বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা করতে পারে। কিন্তু আমরা সে সুযোগ নিতে পারছি না। অন্যদিকে চিংড়ির বড় ক্রেতা দেশগুলোয়ও এখন অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। ভোক্তারাও এখন বেশি দামের বাগদার বদলে ভেনামি চিংড়ি ক্রয় করছে। ফলে ভেনামি ব্যাপকভাবে বিশ্ববাজার দখল করে নিয়েছে। এজন্য ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষের অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াতে সরকারকে ব্যাপক ভূমিকা নিতে হবে। ভেনামি চিংড়ি:  ভারত ও ভিয়েতনাম হাইব্রিড ‘ভেনামি’ চিংড়ি উৎপাদন করে। ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় হাইব্রিড জাতের চিংড়ির ব্যাপক চাষ শুরু হয়েছে। একর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। কম দামের হওয়ায় বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা ব্যাপক। আমাদের রফতানী কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ ভারত ও ভিয়েতনাম হাইব্রিড ‘ভেনামি’ চিংড়ি উৎপাদন। এফএও ও গ্লোবাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যালায়েন্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক চিংড়ির বাজার ছিল মূলত বাগদাপ্রধান। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের কমপক্ষে ৬২টি দেশে ভেনামির চাষ হচ্ছে সফলভাবে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ রয়েছে ১৬টি। মড়ক, বিকল্প ফসল ও অন্যান্য সমস্যাও ঘিরে রেখেছে চিংড়ি রফতানি খাতকে। বাগদার তুলনায় ভেনামির প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই ভেনামির চাষ চলছে। এতে সফলতাও আসছে। এর ভাল উদাহরণ ভারত। ভারতে ভেনামির যাত্রা ২০০১ সালে। ২০০৯ থেকে তা বাড়তে শুরু করে। কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারি অনুমোদন ও পৃষ্ঠপোষকতা মিলে। গত বছরও দেশটিতে প্রায় ছয় লাখ টন ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়। অর্থাৎ বর্তমানে দেশটির মোট উৎপাদনের প্রায় ৯৫ শতাংশই ভেনামি। ২০২০ সাল নাগাদ ১০ লাখ টন ভেনামি উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে দেশটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও এ বাবদ ১৫৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে গলদা, বাগদার পাশাপাশি সস্তা ও বাজার সমাদৃত ভেনামি চাষের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। অন্যথায় বাগদা ও গলদার ওপর নির্ভর করে থাকলে চিংড়ি খাতে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে পারে বাংলাদেশ। ২০০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক চিংড়ির বাজার ছিল মূলত বাগদাপ্রধান। নব্বইয়ের দশকে প্যাসিফিক সাদা চিড়ি বা ভেনামি বাজারে আসে। এরপর থেকেই ভেনামি চিংড়ির বৈশ্বিক বাজার বড় হতে থাকে। ব্যাপক প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীলতা ও নিবিড়তা বেশি বলে ভেনামির চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়। ক্রমান্বয়ে এশিয়ার প্রায় সব চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশেই বাগদার পাশাপাশি ভেনামির চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের কমপক্ষে ৬২টি দেশে ভেনামির সফল চাষ হচ্ছে। অধিক ঘনত্বে চাষযোগ্য, মৃত্যুহার কম, উৎপাদন বেশি, কালচার পিরিয়ড কম, খাবারের দাম কম ও উৎপাদন ব্যয় অন্যান্য জাতের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কম হওয়ায় জাতটির চাষ খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া এ জাতের কমবেশি সব ধরনের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা সহনশীলতাও বেশি। পাশাপাশি মাথা ছোট, মাংস বেশি এবং স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। বিশেষ করে কম দামের কারণে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া এর গুণমান যাচাই-বাছাই করে নেয়াও সহজ। উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় এ জাতের চিংড়ি ক্রেতার চাহিদামতো ও সময়মতো সরবরাহ করা সম্ভব। অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদন করা যায়। এছাড়া ক্রপ লসও অপেক্ষাকৃত কম। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ বলে সারা বিশ্বেই সি ফুড বা সামুদ্রিক খাবার হিসেবে চিংড়ি বেশ সমাদৃত। ধারণা ছিল, অন্য সব দেশ যখন ভেনামি চাষে ঝুঁকেছে, আমাদের পক্ষে তখন বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেয়া সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বাগদার উৎপাদন যেমন বাড়ানো যায়নি, তেমনি চাহিদা ও দামও তেমন বাড়ানো যায়নি। বাস্তবে এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্প প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো তেমন সম্প্রসারিত হতে পারেনি। মূল্যহ্রাসের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের চিংড়ি উৎপাদনের গড় হার অনেক কম। ভেনামি চাষ লাভজনক হওয়ায় আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোও বাগদা চিংড়ির পরিবর্তে ভেনামি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। এর ফলে আমাদের বাগদার বাজার ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। পক্ষান্তরে ভেনামি চিংড়ির বাজার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সি ফুড এক্সপো গ্লোবালে সস্তায় ভেনামি চিংড়ি পাওয়ায় আমদানিকারকরা ভেনামির সমমূল্যে বাগদা চিংড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব করেন। কিন্তু সমস্যা হলো, ভেনামির মতো বাগদার উৎপাদন ব্যয় এতটা কম নয়। উপরন্তু আমাদের কাঁচামাল কম। শিল্পও বড় নয়। ওভারহেডও বেশি। ফলে কম দামে দেয়ার সুযোগ নেই। তাই প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। শুধু বাগদা দিয়ে বিশ্ববাজারে টিকে থাকা যাবে না। যেহেতু আমাদের হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের গড় হার কম, সেহেতু উৎপাদন খরচও আনুপাতিক হারে বেশি। বর্তমানে সরকার ১০ শতাংশ হারে যে নগদ সহায়তা দিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তা ভেনামির আধিক্যের কারণে তাতেও বাজারে টিকে থাকা মুশকিল। তাই চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প ও ফার্নিচার রফতানির মতো বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য হিমায়িত খাদ্য খাতেও নগদ সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। চিংড়ি চাষের অনেক সম্ভাবনারসাথে কিছু চ্যালেঞ্জ : সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প হুমকিতে। বিকল্প পণ্য সিনথেটিক ও প্লাস্টিক ব্যাপক উৎপাদনের ফলে সোনালী আঁশ পাট শিল্প ধংসের পর এবার রফতানি আয়ের অন্যতম খাত চিংড়ি শিল্পও ধীরে ধীরে রুগ্নাবস্থার দিকে যাচ্ছে ‘ভেনামি’ চিংড়ি প্রভাবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বিরাট সম্ভাবনাময় সাদা সোনা চিংড়ি শিল্পটি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। কমে যাচ্ছে চিংড়ি রফতানী। প্রাকৃতিকভাবে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়া, চিংড়িঘেরে ভাইরাস, চাষিদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, কারিগরি জ্ঞান ও উন্নত ব্যবস্থাপনার অভাব, কম্পোজিট ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তুলতে না পারা, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও মানসন্মত চিংড়ি উৎপাদনে ব্যর্থতা, মূূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামা, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার এবং অভ্যতরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির কারনে রফতানী কমে গেছে। কাঁচামাল ও পুঁজি সংকট, দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব। চিংড়ি চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানীর ক্ষেত্রে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় খুবই কম। ইউরোপের বাজারগুলোতে ভারত চিংড়ি রপ্তানিতে ‘ট্যাক্স ফ্যাসিলটি’ পায় না। এরপরও প্রতিযোগিতায় আমরা তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এর কারণ আমাদের চেয়ে তাদের চিংড়ি উৎপাদন অনেক বেশী। আবার উৎপাদন ব্যয় কম। তিনি বলেন, এখানে ব্যাংকের এত উচ্চ সুদের হার, যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। ভাইরাসজনিত কারণে চিংড়ি উৎপাদন মারাত্মক মার খায়। এ ছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিং ও বরফ সংকটের কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামালের (চিংড়ি) অভাবে কোম্পানিগুলো তাদের সামর্থ্যরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করে না। ফলে বৈদ্যুতিক ব্যয়, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার ও কর্মচারীদের বেতন মিলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোম্পানিগুলো। আর এসবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে রফতানীতে। মৎস্য চাষীরা জানান, ঘেরের পানির গভীরতা কমে যাওয়া, তাপমাত্রা ও চাষের ব্যয় বৃদ্ধি, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষীরা চিংড়িসহ সাদা মাছ চাষ থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সুত্র জানায়, বিদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে একরপ্রতি চিংড়ি উৎপাদিত হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কেজি। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ৩শ’ থেকে ৫শ’ কেজি। ভাইরাসমুক্ত পোনার সংকট, অতিবৃষ্টিতে চিংড়ির ঘের ভেসে যাওয়া, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও আর্থিক ক্ষতিতে জেরবার হচ্ছেন চাষিরা। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ আনিসুর রহমানের বলেন, চিংড়ি শিল্পটি বিরাট সম্ভাবনাময়। চিংড়ি গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ সংশিষ্টরা চেষ্টা চালাচ্ছেন শিল্পটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রোগবালাইসহ নানা সংকট ও সমস্যায় শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পোনা সংকট ও রোগ বালাই বিশেষ করে ‘ইএমএস’ রোগ ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে ‘হোয়াইট স্পট ডিজিজ’ মারাত্মক ক্ষতি করে দেয় চিংড়ি শিল্পের। নাব্যতা না থাকায় জোয়ারভাটা নেই। বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য যে পরিমাণ লবনাক্ত পানির প্রয়োজন। তা পাওয়া যায় না।রফতানীর মতো কমছে চাষও। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে খুলনার রূপসা, ডুমুরিয়া উপজেলাসহ  মাছের ওজন বাড়াতে ডিপোগুলো সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলিজাতীয় পদার্থ পুশ করে থাকে বলে অভিযোগ। ইতিপূর্বে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে খুলনার রূপসা ও ডুমুরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ পুশ করা চিংড়ি উদ্ধার হয়। নিম্নমানের পোনা ঘেরে ছাড়ার ফলে চিংড়ির মৃত্যুহার বেশি হয়। গলদা চিংড়িরও পোনা স্বল্পতা রয়েছে। তাছাড়া চাষি পর্যায়ে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, অনেক ক্ষেত্রে অসচেতনতা বা অনাগ্রহ রয়েছে। মাটি ও পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞানের অভাবের পাশাপাশি রয়েছে চিংড়ি চাষবান্ধব ঋণ ব্যবস্থার অভাব, চিংড়ি চাষিদের ঝুঁকি কমাতে বীমা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মশালায় আধানিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ, ভূমির জোনিং পদ্ধতির প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন, চাষি পর্যায়ে ভাইরাসমুক্ত পোনা সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি, জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী চাষ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। বহির্বিশ্বে গলদা চিংড়ির বাজার সীমিত এবং বাগদা চিংড়ির বাজার একটু বেশি। এ জন্য বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে হবে। সে সঙ্গে কমাতে হবে উৎপাদন খরচ। যাতে আমরা আরও কম দামে চিংড়ি রফতানি করতে পারি। আশার কথা: বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেও চিংড়ি রপ্তানিতে ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেছেন রপ্তানিকারকরা। চাষীরাও বেশ সচেতন হয়েছে। হাইব্রিড ‘ভেনামি’ চিংড়ি চাষের কিছু উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে চিংড়ি চাষের অবকাঠামো গড়ে তোলা, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হ্যাচারির মাধ্যমে পোনার সরবরাহ বৃদ্ধি, আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ব্যাংক-ঋণ প্রদান ও ঝুঁকি কমাতে ‘চিংড়িবীমা’ চালু করার জোরালো দাবী উঠেছে ।

আরও পড়ুন:

বিষয়: