ঢাকা বৃহস্পতিবার
০২ মে ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ডে ট্রেডিংয়ের মজা ও ঝুঁকি


নিউজ ডেস্ক
46

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০১৮
ডে ট্রেডিংয়ের মজা ও ঝুঁকি



  • স্টাফ রিপোর্টার:- ডে ট্রেডিংয়ের মজা ও ঝুঁকি বেশি। ডে ট্রেডিং কিছু মুনাফার অাশায় প্রতিদিন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা বা লেনদেন করাকে বোঝায়। যারা ডে ট্রেড করে তাদেরকে ডে ট্রেডার বলে। কোনো শেয়ার কেনার পরদিনই ম্যাচুরেট হয় না তাহলে প্রতিদিন কিভাবে কেনা বেচা সম্ভব? ডে ট্রেডারদের পোর্টপোলিওর একটা অংশ চক্রাকারে ম্যাচুরেট হয়। যে কারণে তারা প্রতিদিনই লেনদেন করতে পারে। সপ্তাহে একদিন (উইকলি) ট্রেড করলেও ডে ট্রেডিংয়ের মধ্যে পড়ে।
ডে ট্রেডিং কারা করে:- ক্ষুদ্র ও বড়, ডিলার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ যে কোনো ধরনের বিনিয়োগকারী ইচ্ছা করলেই ডে ট্রেডিং করতে পারে শুধুমাত্র কোম্পানির স্পেনসার বা পরিচালকরা ছাড়া। পেশাগতভাবে শুধু মাত্র শেয়ার বাজারের উপর নির্ভরশীল অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিটা ট্রেডে অল্প অল্প নগত কিছু লাভের অাশায় ডে ট্রেডিংয়ের বেশি করে। ডে ট্রেডিংয়ে লাভবান :- ডে ট্রেডিংয়ে সবচাইতে বেশী লাভবান হয় হাউজ মালিক এবং ডিএসই, সিএসই ও এনবিঅার বা সরকার। কারন ডে ট্রেডারের লাভ হোক, লস যাই হোক লেনদেনের চার্জ দিতেই হয়। এই চার্জ বড় অংশ হাউজ মালিক এবং বাকী অংশ ডিএসই, সিএসই ও এনবিঅার বা সরকার পায়। তবে ডে ট্রেড করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যে কোম্পানিতে ডে ট্রেড হচ্ছে সেটা কোন ট্রেন্ডে অাছে। আপট্রেন্ড অথবা সাইডওয়েজ ট্রেন্ডে ডে, ট্রেড করা তুলনামূলক সহজ কিন্তু ডাউন্ডট্রেন্ডে ডে ট্রেড হয়না বা কঠিন। ব্রোকারেজ হাউজ ডে ট্রেডারদের খাতির বেশী করে এবং ডে ট্রেডিংয়ে হাউজগুলো উৎসাহিত করে নানা কৌশালে। এই উৎসাহিত করার জন্য হাউজের রিপ্রেজেনটিভ বা ট্রেডার (যারা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়, বিক্রয় করে দেয়) অফিসারদেরকে নির্দিষ্ট টার্গেট দেওয়া হয় এবং টার্গেট পূরণের উপর তাদের বাড়তি সূবিধা ও বোনাস নির্ভর করে। ডে ট্রেডাদের বড় অংশ:- ডে ট্রেডারদের মধ্যে একদল বড় ডে ট্রেডার আছে যারা এগ্রিসিভ বাই সেল করে প্রতিদিন ৩-৫% প্রফিট করে। এরা সাধারণভাবে ব্রোকারেজ হাউজ, বড় পুঁজির মালিক বা ডিলার। বাজার যেমন থাকুক আইটেমের (শেয়ারের) উঠানামার কৌশল এদের হাতে (কারণ বড় পুঁজি ও মর্কেটের গভিরতা কম) থাকায় ওই চক্রটি প্রতিদিন কোনো না কোনো আইটেমে এগ্রিসিভ সেল প্রেসার দিয়ে দরপতন ঘটিয়ে বাই দেয় এবং সেল দেয়ার সময় এগ্রিসিভ বাই প্রেসার দিয়ে দর বাড়িয়ে সেল দেয়। যদিও একক কোনো আইটেমে এগ্রিসিভ বাই সেল করে প্রভাবিত করা আইন পরিপন্থী কিন্তু এই চক্রটির নামে বেনামে শত শত পোর্টপোলিও থাকায় এরা কর্তৃপক্ষের চোখে ধূলো দিয়ে এই অবৈধ ডে ট্রেডিং করে আসছে। ওই সব বড় ডে ট্রেডার চক্রের এগ্রেসিভ বাই সেলের কারনেই কোনো নির্দিষ্ট আইটেম সকালে দর বাড়লে বিকালেই পড়ে যায়। মনে করুন ডে ট্রেডিংয়ের উদ্দেশ্যে আজ তারা তাদের বিভিন্ন পোর্টপোলিও থেকে কোনো কোম্পানীর ২ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে তাহলে ওই চক্রটি সকালে ওই কোম্পানীর অনেকগুলো শেয়ার বাই অর্ডার না বসিয়ে ডাইরেক্ট বাই দিয়ে ৪-৫% বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিযয়ে  নিজেদের হাতে থাকা ২ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে। এটি বুঝতে হলে মিনিট চ্যার্ট দেখুন। আর আজকের কেনা শেয়ার রেখে দিবে যেনো আবার ২-৩ লাখ শেয়ার কেনার সময় এগুলো ডাইরেক্ট সেল দিয়ে ওই কোম্পানীর দর পতন ঘটানো যায়। এভাবেই বড় পুঁজির অধিকাংশ ডে ট্রেডার সংঘবদ্ব হয়ে এগ্রেসিভ বাই সেল করে প্রতিদিন কিছু না কিছু প্রফিট তুলে নেয়। এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা টেকনিক্যাল এনালাইসিস ভাল বোঝেন তারা স্মার্ট ডে ট্রেডিং করে প্রতিদিন কিছু কিছু প্রফিট করার পাশাপাশি নিজের পোর্টপোলিওকে বড় পতন থেকে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু বাজার এবং শেয়ারের আচরন সম্পর্কে যাদের তেমন ধারনা নেই তারা ডে ট্রেডিং করলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ম্যাচুরেট দিনে সামান্য লাভের আশায় সব সময় সকালে টানের আইটেম বাই দেয় ফলে বিকালে অথবা পরদিনই তার কেনা রেট থেকে কমে যায়।  হঠাৎ করে সকালে বেড়ে যাওয়া শেয়ারটি বিকালে কমে যাওয়ার কারন হল বড় ডে ট্রেডারদের এগ্রেসিভ লেনদেন। যা ক্ষুদ্র ডে ট্রেডারদের বোঝার মত টেকনিক্যাল ক্ষমতা কম। অাবার বড় পুঁজি ও মর্কেটের গভিরতা কম এবং কমিশন সুবিধার কারণে বড়রা ডে ট্রেডে বাড়তি সুবিধা পায়। যারা কোন কোম্পানিতে ডে ট্রেড করছে যদি তারা ঐ কোম্পানির বড় অংশ শেয়ার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাখতে পারে, তবে তাদের রিস্ক কমে যায়। কারণ তখন বড় অাকারে সেল প্রেসার অাসে না। মানে সাপলাই সাইড আটকে দেওয়া যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যার কারণে সহজেই দর বাড়ানো কমানো যায় নিজেদের সুবিধা মতো। ডে ট্রেডিংয়ের সুবিধাসমূহ: 
  • ডে ট্রেডিংয়ে  দক্ষ হলে, কম সময়ে ভাল লাভ হতে পারে।
  • ডে ট্রেডিংয়ে  চ্যালেঞ্জ আছে, যারা ডে ট্রেডিং করে তারা এই  চ্যালেঞ্জ উপভোগ করে  বা মজা পায়।
  • মার্কেটের আপট্রেন্ডে (স্টকের  আপট্রেন্ডে)  এবং ট্রানজেকশন বেশি থাকলে, ডে ট্রেডিংয়ে বেশি মজা পাওয়া যায়।
ডে ট্রেডিংয়ের অসুবিধাসমূহ:
  • ডে ট্রেডিংয়ে যেহেতু উচ্চ ঝুঁকি আছে, অাপনি যদি দক্ষতা দিয়ে এ ঝুঁকি কমাতে না পারেন তবে, মানুষিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আপনাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
  • কম সময়ে বেশ লস হতে পারে।
  • ব্রোকারেজ হাউজকে কমিশন দিয়ে ও লাভ লস করে, বছর শেষে তেমন লাভ থাকবে না। যে ভাল থাকবে সেটা বিনিয়োগ করেও পাওয়া যেতো।
  • অপারচুনিটি কস্ট হিসেব করলে লস। যেমন ডে ট্রেডিংয়ে সারা বছর অাপনাকে সময় দিতে হবে কিন্তু এই সময়টা অন্য কোন জায়গায় দিলে এই ডে  ট্রেডিং থেকে বেশি লাভ হতো কিনা ভেবে দেখতে হবে।
ডে ট্রেডিং করার আগে:-  ডে ট্রেডিং না করাই ভাল, তবুও যদি ডে ট্রেডিং করতে ইচ্ছা হয় তবে নিচের বিষয়গুলোর উপর নজর রাখবেন।
  • আপনার বাই, সেল কমিশন ২৫ থেকে সর্বউচ্চ ৩৫ পয়সার মধ্যে অাছে কিনা?
  • আপনি টেকনিক্যাল এনালাইসিস ভাল বোঝেন কিনা? ট্রেন্ড, মোভিং এ্যাভারেজ, সাপোর্ট, রেজিসটেন্স বোঝেন কিনা?
  • ভলিউম এনালাইসিস বোঝেন কিনা?
  • পুঁজিবাজারে অভিঙ্গ কিনা?
  • অন্যের কথায় নয়, নিজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাই, সেল করতে দক্ষ কিনা?
  • উচ্চ ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতা অাছে কিনা?
উপরের উত্তরগুলো না হলে ডে ট্রেডিং আপনার জন্য না। আর উত্তর হ্যাঁ হলে মার্কেটের ট্রেন্ড বুঝে ডে ট্রেডিং করতে পারেন, তবে অপারচুনিটি কস্ট হিসেব করে, যদি লাভজনক হয় তবেই ডে ট্রেডিং করুন, নতুবা নয়।

আরও পড়ুন:

বিষয়: