ডেক্স রিপোর্ট : বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, শপিং মলের নন লাইফ পলিসি এবং ব্যাংকঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তির জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে দেশের বীমা উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের কার্যালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে এসব প্রস্তাব দেন বিআইএ এর নেতারা।
বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বীমা খাতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা লিখিতভাবে আরো কিছু বিষয় অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। অর্থমন্ত্রীকে দেয়া লিখিত পত্রে বিআইএ বহুতল ভবন, শপিং মলের মতো স্থাপনাগুলোর বীমা বাধ্যতামূলক করা, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির জীবন বীমা পলিসি বাধ্যতামূলক করা, পুনর্বীমার কমিশনের ওপর ভ্যাট বাতিল করা, জীবন বীমার গ্রাহকদের মুনাফার ওপর গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমা করার অধিকার রহিতকরণ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বীমা পলিসি বিক্রির সুযোগ তথা ব্যাংক্যাসুরেন্স চালুর প্রস্তাব দেয়।
বাধ্যতামূলক বীমা প্রসঙ্গে বিআইএ বলে, দেশে বর্তমানে অনেক বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন এবং শপিং মল রয়েছে। এ স্থাপনাগুলোকে বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনা হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, আবার স্থাপনাগুলোরও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেন। দেনা রেখে ঋণগ্রহীতা মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীদের অনেককে এ ঋণ শোধ করতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ বিতরণের সময় আবেদনকারীর ঋণের সমপরিমাণ অংকের জীবন বীমা আবশ্যক করা হলে, তার মৃত্যুর পর ঋণের অপরিশোধিত অংশ বীমা কোম্পানি পরিশোধ করে দেবে। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে, ব্যাংকের ঋণ আদায়ের সুযোগ বাড়বে এবং বীমা শিল্পেরও গ্রাহক বাড়বে।
বীমা খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিআইএ পুনর্বীমা কমিশনের বিপরীতে উৎসে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে। বীমা কোম্পানি প্রাপ্ত সব প্রিমিয়াম আয়ের ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পুনর্বীমা সুবিধা নেয়। অর্জিত প্রিমিয়ামের একটি অংশই সেখানে ব্যয় করা হয় বিধায় পুনর্বীমায় আবারো ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান দ্বৈত কর বিবেচিত হবে। পুনর্বীমা কমিশনের ওপর ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ২০১৪ সালের আয়করসংক্রান্ত নিয়মের ভিত্তিতে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করায় দেশে জীবন বীমা খাতে পলিসিহোল্ডারের সংখ্যা কমে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে ঝুঁকি ও মুনাফার কথা বুঝিয়ে মানুষকে জীবন বীমা পলিসিতে আকৃষ্ট করা হয়। সেখানে তাদের অর্জিত মুনাফার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স তুলে নেয়া না হলে জীবন বীমার ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে।
এছাড়া মাইক্রোফিন্যান্স ইনস্টিটিউটের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা কোম্পানির বিকল্প হিসেবে এক প্রকার বীমা সুবিধা দিচ্ছে। এটি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের কোনো বীমা দলিল না থাকায় সরকার সেখান থেকে কোনো রাজস্ব পায় না। মাইক্রোফিন্যান্স ইনস্টিটিউটের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীমা কোম্পানির মাধ্যমে এ সেবা প্রদানে বাধ্য করলে একদিকে সরকার স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ বড় রাজস্ব পাবে, অন্যদিকে বীমা খাতও সম্প্রসারিত হবে।