ডেক্স রিপোর্ট: বৈশ্বিক আর্থিক বিপর্যয়-পরবর্তী এক দশকে সবচেয়ে খারাপ বছর পার করল বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলো। নানা কারণে উন্নত বিশ্বের মতো উন্নয়নশীল বাজারগুলোয়ও বিক্রয়চাপ বেড়ে গেছে বিদায়ী বছরে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিবাদ শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির চাকাই থমকে দেয় কিনা, উন্নত বিশ্বে সুদহার বৃদ্ধির ধারা, ব্রেক্সিটের মতো রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ঘটনা, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা তাদের জন্য সবই ছিল দুঃসংবাদ। হাজারো সমস্যার মধ্যেও কিছু দেশের শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলারে হিসাবনিকাশ করা সূচকের রিটার্ন নিয়ে ২০১৮ সালের উত্থান-পতন চ্যাম্পিয়নদের তালিকা করেছে সিএনবিসি।
২০১৮ সালে উত্থানে চ্যাম্পিয়ন : ২০১৮ সালে উত্থানে চ্যাম্পিয়ন দেশগুলো
ইউক্রেন +৮০.৩৯ শতাংশ উত্থান: ইউক্রেনের প্রধান শেয়ার সূচক পিএফটিএস ২০১৮ সালে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। নভেম্বরে রাশিয়া তাদের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আর ২৩ জন ক্রুকে আটক করলে ইউক্রেন ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে মিত্রদের সহযোগিতা চায়। এমন ভূরাজনৈতিক সমস্যাও সেখানকার শেয়ারবাজারকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

মেসিডোনিয়া +৩০.৪১শতাংশ উত্থান:
দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে গ্রিসের সঙ্গে মেসিডোনিয়ার বিবাদ ছিল। জুনে দুপক্ষ একমত হয় দেশটির নাম হবে রিপাবলিক অব নর্থ মেসিডোনিয়া। উভয় দেশের আইনসভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন হতে হবে। তবে গ্রিসের এলাকা দখল করে রাখার অভিযোগে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন হবে— এমন আশায় মেসিডোনিয়ার শেয়ারবাজার বাড়তে থাকে। মেসিডোনিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লু-চিপ সূচক এমবিআই ১০ বছর শেষে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
কাতার +২০.৮৭ শতাংশ উত্থান:
মধ্যপ্রাচ্যের একঘরে দেশটির ওপেক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে বিনিয়োগকারীরা স্বাগত জানিয়েছে। ডলারভিত্তিক বিবেচনায় দোহার শেয়ারসূচক বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া, সৌদি ও মার্কিন প্রশাসনের শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার মতো অভিযোগগুলোর জেরে ২০১৭ সালে প্রতিবেশী দেশগুলো কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও যোগাযোগ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জ্বালানি সম্পদের শক্তিতে বলীয়ান কাতার তাদের ছাড়াই শক্ত পায়ে পথ চলার ইঙ্গিত দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত +১১.৭৫শতাংশ উত্থান:
আমিরাতের এডিএক্স জেনারেল ইনডেক্স গেল বছর প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। সেখানকার অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সালে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সৌদি আরব +৮.৭৭ শতাংশ উত্থান:
সাংবাদিক খাসোগিকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে থাকা সৌদির শেয়ারবাজারও চাপে ছিল, বিশেষ করে বছরের শেষ দিকে। তার পরও ডলারভিত্তিক হিসাবনিকাশে সেখানকার শেয়ার সূচক ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
২০১৮ সালে পতনের চ্যাম্পিয়ন দেশগুলো :
ভেনিজুয়েলা -৯৪.৮৯ শতাংশ পতন:
নগদ অর্থের সংকটে থাকা তেলসমৃদ্ধ লাতিন দেশটির অর্থনীতি ও সাপ্লাই চেইন আক্ষরিক অর্থেই বিপর্যস্ত। পূর্ববর্তী কোনো এক বছরে রিটার্ন চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় ঢুকে গেলেও ২০১৮ সালে দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক আইবিভিসি প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে গেলেও ভেতরে-বাইরের কোনো কিছুই তার হিসাবের সঙ্গে মিলছে না।
আর্জেন্টিনা -৫০.২ শতাংশ পতন:
২০১৮ সালে আরেকটি আর্থিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করে কাটিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিকাশমান বাজারগুলো থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রবণতার অন্যতম শিকার আর্জেন্টিনা। বিনিময় হার পতনের পাশাপাশি, কমোডিটির আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দাভাবও তাদের ক্ষতির কারণ হয়েছে। বছর শেষে ৫০ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে বুয়েন্স আয়ার্সের প্রধান শেয়ারসূচক।
তুরস্ক -৪৩.৩৫ শতাংশ পতন:
বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রবণতার পাশাপাশি আরো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে তুর্কি লিরার দরপতন। এর ওপর সুদের হার নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান আর তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে দ্বিমত। মার্কিন যাজককে আটকের ঘটনা, খাসোগি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৌদির সঙ্গে বিরোধ— সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক ফ্রন্টেও দুশ্চিন্তা কম ছিল না।
চীন -২৮.৬৪ শতাংশ পতন:
২০১৫ সালের ধসের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটির শেয়ারবাজার। এর মধ্যে আবার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের দুঃসংবাদ আসছে দফায় দফায়। বছর শেষে ২৮ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে সাংহাইয়ের কম্পোজিট সূচক। ৯০ দিন বাণিজ্য বিবাদ বন্ধ থাকবে বলে দুই প্রেসিডেন্ট সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত আবার কী আসে— তা নিয়ে আশঙ্কা কাটছে না বিনিয়োগকারীদের।
পাকিস্তান -২৮.০৭ শতাংশ পতন:
অর্থনীতির অন্য সব ক্ষেত্রের মতো স্টক এক্সচেঞ্জেও চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ পেয়েছে পাকিস্তান। কয়েক বছর শক্তিশালী উল্লম্ফনের পর ২০১৮ সালে এক-চতুর্থাংশের বেশি দরপতন হয়েছে সেখানকার শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগকারীদের চোখে কারণ হিসেবে উঠে আসে বেইল আউট পাওয়ার চেষ্টা। আইএমএফের কাছে দ্বিতীয় দফা বেইল আউট নেয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। নভেম্বরে শর্তাবলিতে সম্মত হতে পারেনি মুদ্রা তহবিলটি। তবে জানুয়ারিতেই একটি ইতিবাচক ফল আশা করছে ইমরান খানের সরকার। সূত্র বণিক বার্তা