মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান : সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নতুন রুপে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তালিকাভূক্ত হওয়ার পর থেকেই কোম্পানিটির ম্যানেজমেন্টের মধ্যে দন্দ্ব ছিল। যার প্রভাব পড়েছিল ব্যবসায়, মুনাফায়, ডিভিডেন্ডে। বর্তমানে কোম্পানির নতুন করে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। যার কারণে কোম্পানির সম্প্রসারিত বেশ ভলো চলছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান এসব কথা বলেন।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান অফিস ধানমন্ডিতে সম্প্রতি তার সঙ্গে কোম্পানির বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। এ সময় তিনি কোম্পানির বিভিন্ন সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন। একই সঙ্গে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বিষয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান স্টক বাংলাদেশকে বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে ৫ কোটি প্রিফারেন্স শেয়ার ছেড়ে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য আগামী ৫ নভেম্বর অতিরিক্ত সাধারণ সভার (ইজিএম) আহ্বান করা হয়েছে।
ইজিএমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির বিষয়ে অনুমতি নেয়া হবে। অনুমতি নেয়ার পরেই মূলত ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেছে।ইনফোস্যাপেক্সের তিনটি সেকশন রয়েছে। সেকশন তিনটি হচ্ছে- রোবোটিক প্রোসেস অটোমেশন (আরপিএ), পেপার লেস মিটিং এবং বিজনেস প্রোসেস অটোমেশন। প্রত্যেক সেকশনের সেল, ডেভেলপমেন্ট করাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করবে সুহৃদ ও ইনফোস্যাপেক্স। ইতোমধ্যে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি এবং ভালো সাড়া পাচ্ছি।
আমরা আরও ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে আসব। যেমন আমরা পিভিসি পাইপ বানানোর পরিকল্পনা করছি।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত যেসব কোম্পানির স্পন্সর ডিরেক্টরদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে ও যেসব কোম্পানির পরিচালকের এককভাবে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কোম্পানির কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে যেসব পরিচালকের ব্যক্তিগতভাবে শেয়ার ২ শতাংশের নিচে তাদের পদ শূণ্য ঘোষণা করে যাদের শেয়ার ২ শতাংশ বা তার অধিক রয়েছে তাদের নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ার ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৩০ শতাংশের নিচে কোম্পানিটির স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ার।
এসব বিষয়ে মাহমুদুল হাসান বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার কত দিনের মধ্যে পূরণ করতে হবে সে বিষয়ে বিএসইসি কোন দিক নির্দেশনা দেয়নি। আর আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিচালকদের ২ শতাংশ করে শেয়ার ধারণ পূরণ করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিএসইসি আমাদের রেগুলেটর। তারা আমাদের রেগুলারাইজড করবে।
চেয়ারম্যান কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবি হলো- এসব বিষয় পূরণ করতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময় দেয়া হোক। তাছাড়া ইতোমধ্যেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসিতে সময় বাড়াতে চিঠি দিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি রয়েছে যেসব কোম্পানির স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ার ৩০ শতাংশ বা তার ওপরে। অথচ তাদের শেয়ার দর ২ থেকে ৩ টাকা অর্থাৎ একটি ডিমের দামের চেয়েও কম। অথচ সুহৃদের শেয়ার দর ২৫ থেকে ২৬ টাকা। আসলে স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ার ৩০ শতাংশ হলেই কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, ব্যাপারটি তা নয়। কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকটাই নির্ভর করে ম্যানেজমেন্টের ওপরে।
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। এরপরে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কোন লভ্যাংশ দিতে দেয়নি। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে কোম্পানিটির প্রতি অসন্তোষ বিরাজমান ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি নতুন রুপে ফিরে এসেছে। নতুন ম্যানেজমেন্ট ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর সূত্র মতে, কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ১০ টাকার ফেসভ্যালুর কোম্পানিটির রিজার্ভে রয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গত বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
কোম্পানির ওয়েবসাইট সূত্রে আরও জানা যায়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের মোট শেয়ার রয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫০টি। এরমধ্যে স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ার রয়েছে ৯ দশমিমক ৯৯ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য,২০১৪ সালে তালিকাভূক্ত হওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি গত তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি মোট আয় করেছে ১ দশমিক ০৭০ টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ০ দশমিক ৩১০ টাকা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০ দশমিক ৩৫০ টাকা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ০ দশমিক ৪৪০ টাকা।