ডেক্স রির্পোট: মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম বস্ত্র বা কাপড়। বিশ্বের জনসংখ্যা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে কাপড় তথা পোশাকের চাহিদা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাপড় তৈরির উপাদান সুতার কাঁচামাল তুলার চাহিদাও। ক্রমবর্ধমান চাহিদার জের ধরে তুলার বৈশ্বিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেও বজায় রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।
এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক আমদানি বাণিজ্য আগের ছয় মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে যেতে পারে। এ সময় পণ্যটির বৈশ্বিক আমদানির পরিমাণ ৪ কোটি ১৭ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) ছাড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। মূলত বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীনসহ শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এবারের মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক আমদানি বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর কমোডিটি অনলাইন ও এগ্রিমানি।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক আমদানি দাঁড়াতে পারে ৪ কোটি ১৭ লাখ ১৩ হাজার বেলে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এক বছরের ব্যবধানে তুলার বৈশ্বিক আমদানি বাড়ছে ৬ লাখ বেল। বিগত ছয়টি মৌসুমের মধ্যে তুলার বৈশ্বিক আমদানির এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ।
তুলা আমদানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ছয় মৌসুম ধরে দেশের বাজারে তুলা আমদানিতে চাঙ্গাভাব বজায় রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৮১ লাখ বেল তুলা আমদানি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। আগের মৌসুমে পণ্যটির আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৬ লাখ বেল। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে দেশে তুলা আমদানি বাড়তে পারে ৫ লাখ বেল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই হতে পারে তুলা আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড।
তুলনামূলক সস্তা শ্রমের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বিশ্বে নজর কেড়েছে। বর্তমানে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ অনেকাংশে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাতের ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সুতা ও সুতা তৈরির কাঁচামাল তুলার চাহিদা। গত এক দশকেই দেশে তুলার চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেই তুলনায় বাড়েনি পণ্যটির উৎপাদন। এ কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা তুলা দিয়ে পূরণ করতে হচ্ছে। চাহিদার পাশাপাশি গত এক দশকে দেশে তুলা আমদানিও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
একই চিত্র দেখা যেতে পারে ভিয়েতনাম ও চীনের ক্ষেত্রেও। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ ভিয়েতনামে এবারের মৌসুমে পণ্যটির আমদানি ৭৬ লাখ বেলে পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৭ লাখ বেল বেশি। পণ্যটির আমদানিকারকদের তালিকায় চীনের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ বেল তুলা আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। ভিয়েতনাম ও চীনের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি হতে পারে।
এবারের মৌসুমে ইন্দোনেশিয়ায় ৩৬ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা আমদানি হতে পারে। তুরস্কে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৯ লাখ বেলে। এবারের মৌসুমে পাকিস্তান ও ভারতে যথাক্রমে ২৬ লাখ বেল ও ১৫ লাখ বেল তুলা আমদানির সম্ভাবনা দেখছে ইউএসডিএ।
এদিকে ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বের শীর্ষ তুলা রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্যটির রফতানি ১ কোটি ৫০ লাখ বেলে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। পণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় এর পর রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল ও ভারত। এবারের মৌসুমে ব্রাজিল থেকে তুলা রফতানি আগের তুলনায় বেড়ে ৫৫ লাখ বেলে পৌঁছতে পারে। অন্যদিকে ভারত থেকে পণ্যটির রফতানি নেমে দাঁড়াতে পারে সাকল্যে ৪৩ লাখ বেলে। একই মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩৭ লাখ বেল তুলা রফতানির পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সূত্র বণিক বার্তা