স্টাফ রিপোর্টার : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ও সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলস কোম্পানি লিমিটেড অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পাঁচ বছরের মধ্যে কারখানার উৎপাদন বন্ধ ও হিসাব বছর শেষ হলেও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে সংকটে পড়েছে এই দুই কোম্পানি। ‘জেড ক্যাটাগরি’তে স্থান পাওয়া কোম্পানি দুটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যের অর্ধেকেরও নিচে। এখন তালিকাচ্যুতির শঙ্কায় রয়েছে এই দুই কোম্পানি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ও সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইল পরিচালনায় উদ্যোক্তা পরিচালকরা সক্রিয় না থাকায় কোম্পানি দুটি ডুবতে বসেছে। সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলের কারখানাটি প্রায় দুই বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ। ২০১৭-১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও দাখিল করতে পারেনি কোম্পানিটি। কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতিতে তালিকাচ্যুত করতে সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম স্টক এইক্সচেঞ্জ (সিএইসই)।
অন্যদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা কোম্পানি দুটি তালাবদ্ধ থাকার কারণে পরিদর্শন করতে পারেনি। তালিকাভুক্তির ভুক্তির পাঁচ বছরের মধ্যেই এই দুই কোম্পানি অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ও সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইল কাগজে-কলমে ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত মুনাফা দেখালেও বার্ষিক নিরীক্ষিত প্রতিবদন দাখিল করতে পারেনি।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজার থেকে অভিহিত মূল্যে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলস লিমিটেড। সংগৃহীত অর্থের ৬৮ শতাংশ দিয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধ এইবং অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে কারখানা ভবন ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে ব্যয় করে কোম্পানিটি। অর্থ সংগ্রহের সময় সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইল প্রাক-আইপিও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএইস) দেখায় ১ টাকা ৭৮ পয়সা। তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমতে দেখা গেছে। ২০১৬ সালে সর্বশেষ ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।
জানা গেছে, সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোকসানা মোরশেদ তালিকাভুক্ত অপর কোম্পানি ফ্যামিলিটেক্সেরও উদোক্তা। রোকসানা মোরশেদ, তার স্বামী মোহাম্মদ মোরশেদ ও অপর উদ্যোক্তা জুন কিয়ং উন তাদের হাতে থাকা ফ্যামিলিটেক্সের উদ্যোক্তা শেয়ার তালিকাভুক্তির দুই বছরের মধ্যেই পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বিক্রি করে দেন। ফ্যামিলিটেক্স তালিকাভুক্তির দুবছর পর ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ মধ্যে নিজেদের ৪১ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এই উদ্যোক্তাদেরই এইকটি অংশ সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলেরও উদ্যোক্তা পরিচালক।
এদিকে রোকসানা মোরশেদ সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যার হাতে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানির ২৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। তালিকাভুক্তির পর তার শেয়ার নেমে আসে ১৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে। সবমিলিয়ে সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইল তালিকাভুক্তির সময় উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার ছিল।
বর্তমানের তাদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ নেমে এসেছে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশে। বিএইসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ থাকতে হবে এইবং এইর কম থাকলে উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার কীভাবে কমল, তার ব্যাখ্যা স্টক এইক্সচেঞ্জ কিংবা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।
জানা গেছে, সিঅ্যান্ডএই টেক্সটাইলের উদোক্তা পরিচালকের মধ্যে বিবাদ থাকায় ২০১৭ সালের শুরু থেকেই কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। স্টক এইক্সচেঞ্জের পরিদর্শনে এইর সত্যতা মেলায় জেড ক্যাটাগরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর কারখানা চালুর সম্ভাবনা না থাকায় সিএইসই কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুতির সুপারিশ করে বিএইসইসিতে চিঠি পাঠিয়েছে।
এদিকে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চলাকালীন তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের প্রধান উদোক্তা নিজ কারখানায় অগ্নিকান্ড দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর থেকেই সংকটে রয়েছে কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও ব্যবস্থাপনা সংকটের কারণে দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পরিচালকদের মধ্যেও বিবাদ রয়েছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানিটি মুনাফা দেখালেও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল ও বার্ষিক সাধারণ সভা (এইজিএইম) করতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।
পরের বছর ২০১৭-১৮ হিসাব বছর শেষ হলেও গত আট প্রান্তিকে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি কোম্পানিটি। ফলস্বরূপ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এইক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএইসইসি)।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড। সে সময় অভিহিত মূল্যে সাড়ে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। সংগৃহীত অর্থের ৪৫ শতাংশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ও অবশিষ্ট অর্থ মূলধনী বিনিয়োগ করে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানির ইপিএইস ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা। প্রান্তিক ও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এইক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এইর ১২ ধারার লঙ্ঘন।